Friday 3 May 2013

কামারুজ্জামানের মামলার হালচাল । ন্যায়বিচার বনাম প্রহসনের বিচার ! ন্যায়বিচার হলে কামারুজ্জামানের বেকুসর খালাস নিশ্চিত।


 হিটলারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিশ্বের সেরা মিথ্যাবাদী উপাধী প্রাপ্ত জোসেফ গোয়েবলস একটা কথা বলতেন ,'একটা মিথ্যা কথা বা মিথ্যা অপবাদ ১০০ জন লোকের কাছে পৌঁছে দাও, দেখবে ঐ মিথ্যা অপবাদই একসময় সত্যে পরিণত হয়েছে' আমাদের মিডিয়া গোয়েবোলসের এ নীতি মেনে বহুদিন থেকেই প্রচার করে আসছে জামায়াত নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতা বীরুধী ।তারা এ অপপ্রচারে সফলও হয়েছে। জামায়াত নেতৃবৃন্দ রাজাকার নন এ কথা অনেক তরুণ বিশ্বাসই করতে চাইনা।কারণ তারা চলে আবেগ দিয়ে, যুক্তির ধার ধারেনা। কামারুজ্জামানের মামলার হালচাল নিয়ে আলোচনার পূর্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্য অনেক দলের মত জামাতে ইসলামীও চাইনি ভারতের সহায়তাই দেশ স্বাধীন হোক। এমনকি মজলুম জন নেতা মাওলানা ভাসানির দল ন্যাপও স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিল ------ ১. পি ডি পি ২. জাতীয় দল। ৩. কৃষক শ্রমিক পার্টী ৪. সকল উপজাতি। ৫. চীনপন্থি কম্যুনিস্ট পার্টী । ৬. বৌদ্ধ সম্প্রদায় । ৭. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম । ৮. জামায়াতে ইসলামী। ৯. নেজামে ইসলাম । ১০. খেলাফত আন্দোলন । ১১. মুসলিম জাতীয়তাবাদী দল। ১২. মুসলিম লীগের তিন গ্রুপ। ১৩. ইদানীং কিছু বুদ্ধিজীবীদের নামও উঠে আসছে এ তালিকায়। তাহলে শুধু জামাতের নাম আসছে কেন? বাকিদের নামত কখনো শুনিনি। তাহলে আসল এজেণ্ডা কি? ৭১ এ জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা কি ছিল এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর নেতা, বক্তা-ওয়ায়েজ ও ‘সওয়াল-জওয়াব’ ধারণার জন্য বিখ্যাত খন্দকার আবুল খায়ের লিখেছেন : ‘আমি যে জেলার লোক, সেই জেলায় ৩৭টি ইউনিয়ন থেকে জামায়াত আর মুসলিম লীগ মিলে ৭০-এর নির্বাচনে ভোট পেয়েছিল দেড়শতের কাছাকাছি আর সেখানে রাজাকারের সংখ্যা ১১ হাজার, যার মাত্র ৩৫টি ছেলে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগারদের।… আমার কিছু গ্রামের খবর জানা আছে, যেখানে ৭১-এর ত্রিমুখী বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য গ্রামে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন যে, দুই দিকেই ছেলেদের ভাগ করে দিয়ে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে গ্রামের শতকরা ১০০ জন লোকই ছিল নৌকার ভোটার, তাদেরই বেশ কিছুসংখ্যক ছেলে যোগ দেয় রাজাকারে। যেমন কলাইভাঙ্গা গ্রামের একই মায়ের দুই ছেলের সাদেক আহমদ যায় রাজাকারে, আর তার ছোটভাই ইজহার যায় মুক্তিফৌজে।… এটাই ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবস্থা।… যারা ছিল সুযোগ সন্ধানী, তারা সুযোগ পেয়েছে, ব্যস রাজাকার হয়ে পড়েছে।… এরপর এগার হাজার রাজাকার যারা নৌকা থেকে নেমে এসেছিল, তাদের সব দোষ গিয়ে আমাদের ঘাড়ে চাপল।’ (খন্দকার আবুল খায়ের, ‘১৯৭১-এ কি ঘটেছিল রাজাকার কারা ছিল’, যশোর : তৌহিদ প্রকাশনী (তৃতীয় সংস্করণ), ১৯৯২, পৃ. ৪৪-৪৫,৬২)। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর উদ্ভাবন প্রসঙ্গে অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, " ১৯৮০’র দশকে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। সকল আন্দোলনকারী দলের লিয়াজোঁ কমিটি একত্রে বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করতো। তখন তো কোন দিন আওয়ামী লীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী মনে করেনি। ফেব্রুয়ারি ১৯৯১-এর নির্বাচনের পর সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের সহযোগিতা প্রার্থনা করে আমার নিকট ধরনা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু সাহেব জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ সাহেবের মাধ্যমে আমাকে মন্ত্রী বানাবার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তখনও তো আওয়ামী লীগের মনে হয়নি যে, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী! পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী জামায়াতের সমর্থন লাভের আবদার নিয়ে যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখনও তো তাদের দৃষ্টিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ ‘যুদ্ধাপরাধী’ ছিল না। এরপর এমন কী ঘটলো যে আওয়ামী লীগ ও কতক বাম দল জামায়াতকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দিয়ে জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য জেহাদে নামলেন? এরূপ দু’মুখো নীতি কোনো সুস্থ রাজনীতির পরিচয় বহন করে না। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয়ী হয় আর বিএনপি ১৯৭টি আসন পায়। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলসমূহের শতকরা ২০ ভাগ ভোট একতরফা বিএনপি পাওয়ায় এসব ভোট থেকে বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগ মাত্র পাঁচ হাজার থেকে বিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে বহু আসন হারায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার কারু হিসেবে বুঝতে পেরেছিল যে, জামায়াতে ইসলামীকে ঘায়েল করতে না পারলে ভবিষ্যতে নির্বাচনে বিজয়ের কোনো আশা নেই। এ উপলব্ধি থেকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধীর অপবাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রচারাভিযান চালায়। যাদেরকে এক সময় ‘কলাবরেটর’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল তাদেরকেই এখন আওয়ামী লীগ ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বিচার করতে চাচ্ছে। ২০০১ সালের পূর্বে কখনো জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলা হয়নি। এখন পাকিস্তানী ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বিচার করার জন্য ১৯৭৩ সালে যে আইন করা হয়েছিল সে আইনেই আওয়ামী লীগ নতুনভাবে আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে বিচার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১, মোট দু’বার ক্ষমতায় ছিল। তখনতো তারা আমাদের এ আখ্যাও দেয়নি এবং ঐ আইনে বিচারের উদ্যোগও নেয়নি। সেটা কেন নেয়নি এর কি কোনো সন্তোষজনক জবাব আওয়ামী লীগ জনগণের সামনে দিয়েছে বা দিতে পারবে?" ♣♣♣ এবার আসুন দেখে নেই কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ মামলার হালচাল ♣♣♣ ২০১০ সালের ১৩ই জুলাই মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে আটক করা হয়।একই বছর ২২ শে জুলাই তাকে পুলিশি তৎপরতায় বাধা দানের নামে একটি মামলায় শাহবাগ থানায় গ্রেফতার দেখানো হয়। দুই বছর বিনা চার্জে কারাবরনের পরে কামারুজ্জামান সাতটি চার্জে অভিযুক্ত হন। এই চার্জ গুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ২রা জুলাই ২০১২ সালে কেস গুলোর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। চার্জ গুলোর সারসংক্ষেপ: কেস ১. (নির্যাতন) অভিযোগঃ পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থানের জন্য শেরপুর কলেজের প্রফেসর সাঈদ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতনের অভিযোগ। উলঙ্গ করে, মাথা কামিয়ে তাকে আল বদরের সদস্য হিসেবে শেরপুর শহরে হাঁটতে বাধ্য করা হয়। এবং অভিযুক্ত সহ অন্যান্যরা তাকে চাবুক পেটা করেন। মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন প্রফেসর আব্দুল হান্নান বেচে থাকা সত্ত্বেও তাকে মামলার সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থিত করাতে পারেননি। তিনি এখন মারাত্মক অসুস্থ। প্রসিকিউশন তাকে জোর করে মামলার সাক্ষ্য বানায়। কিন্তু তিনি মিথ্যা না বলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে প্রসিকিউশন তাকে সাক্ষ্য হিসেবে হাজির করেননি। বাকি দুজন সাক্ষী যারা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে চেয়েছেন তারা কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না । শুধু তাই নয় তাদের বিবৃতিকে অসংগতি পাওয়া গেছে। কেস ২. (অপহরণ, নির্যাতন, খুন) অভিযোগঃ কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আল বদরের কিছু সদস্য শেরপুরের ঝিনাইগাতির রমনাপুর গ্রামের বাদিউজ্জামানকে অপহরণ করার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয় , সাড়া রাত তাকে আহাম্মেদ নগর আর্মি ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছে এবং পরবর্তী দিন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং তার মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। মামলার অবস্থানঃ প্রসিকিউশন বাদিউজ্জামানের ভাই হাসানুজ্জামান কে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করেন। অনেক অসঙ্গতিপুর্ন বর্ণনা ছাড়াও তিনি বলেন, তিনি এবং তার পরিবার কয়েকজন কৃষকের কাছে শুনেছেন, কামারুজ্জামান এবং তার দল তার ভাইকে হত্যা করে। এইরকম শোনা কথা কখনই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও হাসানুজ্জামান দাবি করেন ১৯৭২ সালে তার পরিবার কামারুজ্জামান এবং আর দশজনের বিরুদ্ধে তার ভাইকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রসিকিউশন তার এই দাবির সপক্ষে কিছুই প্রমান উপস্থিত করতে পারেনি। তদন্তে পাওয়া যায়, এব্যাপারে প্রসিকিউশনের এফআইআর একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন মামলা যাতে অভিযুক্তের নাম নেই। কিন্তু এই আজব কোর্ট বিবাদি পক্ষের আইনজীবীদের এফআইআর এর কপি গ্রহণ করছে না কারন এটা প্রত্যয়ন করা নয়। কোন আমলাই এখন এই স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট প্রত্যয়ন করছে না। তাই এটি জমা দেয়া যায়নি। অপরদিকে প্রসিকিউশন তাদের অভিযোগের সমর্থনে কোন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেনি। কেস ৩. (গণহত্যা) অভিযোগঃ বিধবা পল্লি সোহাগপুরে আরমিদের হামলায় কামারুজ্জামানের ভুমিকার অভিযোগ করা হয়েছে। ২৫শে জুলাই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মি এবং তাদের স্থানীয় দোসররা সোহাগপুর গ্রামে ঝটিকা আক্রমন চালায়, অনেক মহিলাকে ধর্ষণ করে এবং অন্তত ১২০ জনকে হত্যা করে। মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন তিন জন বিধবাকে মামলার সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে যারা ক্যামেরা ট্রায়ালে তাদের প্রামানিক সাক্ষ্য প্রদান করে। হোসেনা বেয়া যার স্বামী পাকিস্তানি আর্মির আক্রমণে নিহত হন। তিনি দাবি করেন, স্থানীয় বড়দের কাছে তিনি শুনেছেন কামারুজ্জামান পাক আর্মিদের গ্রামে নিয়ে আসে, এবং হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন। হাফিজা বেয়া, একই রকম আরেকজন বিধবা ঘটনার সময় কামারুজ্জামানে ঘটনার সময় উপস্থিত থাকার দাবি করেন । কিন্তু তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাথে সামনা সামনি সাক্ষ্য দানের সময় এমনটি দাবি করেননি। করফুলি বেয়া, আরেকজন বিধবা গ্রামের বড়দের কাছে কামারুজ্জামানের জড়িত থাকার ব্যাপারে শুনেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া সাক্ষাতকারে কামারুজ্জামানের জড়িত থাকা কথা বলেননি। যা একটি বড় অসংগতি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা নামে একটি বইয়ে সোহাগপুরের গণহত্যার বর্ননা দেয়া হয়েছে। সেখানে করফুলি বেয়া সহ অনেক বিধবারই সাক্ষাতকার প্রকাশ করা হয় যেখানে কামারুজ্জামানের কথা একবারও বলা হয়নি। কিন্তু এর বিপরীতে ডিফেন্স টিম অনেক শক্ত এবং গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য হাজির করেছে। সাক্ষী একটা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য যিনি পাকিস্তানি আর্মির হামলায় তার পরিবার সহ সব হারিয়েছিলেন। সে দাবি করেন, কামারুজ্জামান এই রকম কোন ঘটনার সাথে বিগত ৪০ বছর জড়িত ছিল না, এমনকি সোহাগপুর ২০০৭ সালে বিধবাপল্লি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও না।তিনি আরো উল্লেখ করেন, গ্রামবাসী ভাল করেই অবগত আছে যে সরকার মিথ্যা সাক্ষিদের টাকা দিয়ে অভিযুক্তের বিরদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করছে। কেস ৪. (অপহরণ, আটক, খুন) অভিযোগঃ ১৯৭১ সালে ২৩শে আগস্ট গোলাম মোস্তফা তালুকদার কে আটক করে হত্যা করার অভিযোগ করা হয়। কামারুজ্জামানের আদেশে তালুকদারকে আটক করে সুরেন্দ্র সাহার পরিত্যাক্ত বাড়িতে আল বদরের আস্তানায় আটক করা হয়। পরে অভিযুক্ত এবং আর কয়েকজন মিলে তালুকদারকে মেরে নদীতে ফেলে দেয়ারও অভিযোগ করা হয়। মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন ভিকটিমের ভাই মোশাররফ তালুকদারকে মামলার সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে। তিনি বলেন , পরবর্তীতে তার পরিবার আবুল কাসেম (যাকেও তালুকদারের সাথে হত্যা করার জন্য ধরে নেয়া হয়েছিল এবং তিনি পালিয়ে আসেন ) এর কাছে শুনেন কামারুজ্জামান ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। মোশাররফ তালুকদারের বয়স ছিল তখন মাত্র ১১, তার এই প্রামানিক সাক্ষ্য গুরুত্ব সহকারে নেয়ার কিছু নেই। এছাড়াও তিনি স্থানীয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে ছিলনে। আদালতের কাছে তার উদ্দ্যেশ্য স্পষ্ট। আর একজনকে এই মামলার সাক্ষী হিসেবে নেয়া হয় । কিন্তু তাদের দুজনের কেউই সরাসরি ঘটনাস্থলে কামারুজ্জামানকে দেখেননি। এবং তাদের দু জনের সাক্ষ্যের মধ্যে সময়, ঘটনার স্থান, এবং অনুক্রমে অমিল রয়েছে। উদাহরন হিসেবে বাংলা নিউজ ২৪ এ প্রকাশিত নিউজে উল্লেখিত হয়; অভিযোগে বর্ণিত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে ধরে নিয়ে যাওয়া ও মেরে ফেলার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুই সাক্ষীর দেওয়া সাক্ষ্যের মধ্যে মিল না পাওয়ায় ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করলে রাষ্টপক্ষের প্রসিকিউটর সাইফুল বলেন, ‘‘অনেকদিন আগের ঘটনা। কামারুজ্জামান সে সময় উপস্থিত ছিলেন কিনা এটাই মুখ্য, ধরার উপায় বা সময় নয়।’’ কেস ৫. (অপহরণ, আটক, নির্যাতন) অভিযোগঃ লিয়াকত আলি এবং মজিবুর রহমান পানুকে আটক করে রাঙ্ঘুনাথ বাজারে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসার অভিযোগ করা হয়। তাদেরকে সেখানে নির্যাতন করে পরে একটি পুলিশ স্টেশন এ নিয়ে যাওয়া হয়। চার দিন পরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে তাদের ঝিনাইগাতি রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে আর ১১ জনের সাথে লাইনে দাড় করান হয়, কিন্তু পরে লিয়াকত, পানু এবং অন্য একজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকিদের হ্ত্যা কয়া হয়। ঘটনাস্থলে অভিযুক্তের উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়। মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন লিয়াকত এবং পানু উভয়কেই সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে সক্ষম হয়। লিয়াকত আলি আটক, অপহরণ, নির্যাতনের কোন সময়ই কামারুজ্জামানের অনুপস্থিতির সত্যতা যাচাই করেন। পানু বলেন, সে নিজে কামারুজ্জামানকে দেখেননি কিন্তু অন্য একজনের কাছে শুনেছেন যে কামারুজ্জামান ক্যাম্পে সকাল এসে চলে যায়। অভিযোগ প্রমাণের সময় সাইফুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের সাত নম্বর সাক্ষী লিয়াকত আলীকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সাক্ষী ভয় পেয়ে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানকে চিহ্নিত করেননি।’’ এ সময় ট্রাইব্যুনাল আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘‘সেটা ট্রাইব্যুনাল শুনবেন না। আপনি এর আগে আপনার এ সাক্ষীকে বৈরি ঘোষণা করেননি কেন? এসব আর্গুমেন্ট গ্রহণ করলে একজন আসামিকে একবার না, এক হাজার বার ফাঁসি দিতে হবে।’’ একই অভিযোগের ক্ষেত্রে দুইজন সাক্ষীর দেওয়া সাক্ষ্যে ঘটনার দুই রকম তারিখ বলা হয়। সাক্ষী লিয়াকত আলী অভিযোগে বর্ণিত ঘটনার তারিখ উল্লেখ করলেও আসামি সনাক্তের সময় ‘সেই কামারুজ্জামান’কে চিহ্নিত না করায় তার বক্তব্যে রিলাই করতে পারেননি ট্রাইব্যুনাল। একই ভাবে আরেকজন সাক্ষী মুজিবুর রহমান পানুর বক্তব্যে এ অভিযোগের সঙ্গে আসামির সম্পৃক্ততা খানিকটা বোঝা গেলেও অভিযোগে বর্ণিত ঘটনার তারিখের সঙ্গে তার বর্ণিত তারিখ মেলেনি। ফলে এ সাক্ষীর ক্ষেত্রেও একই পথ বেছে নিতে হয় ট্রাইব্যুনালকে।(সোর্স:বাংলা নিউজ ২৪) কেস ৬. (আটক ও হত্যা) অভিযোগঃ ১৯৭১ সালের নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে আল বদদের কতিপয় সদস্য টুনু এবং গল্কি বাড়ির জাহাঙ্গিরকে আটক করা হয়। এবং তাদের ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের ডাক বাংলোয় নেয়া হয়। টুনুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়, জাহাঙ্গীরকে আটক রেখে পরে ছেড়ে দেয়া হয়। মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন কোন সাক্ষিকে উপস্থিত করাতে পারেননি। ছয় নম্বর অভিযোগ(টুনু সহ ৫ জন হত্যা) প্রমাণের সময় একজন সাক্ষীর(হামিদুল হক) সাক্ষ্য তুলে ধরেন প্রসিকিউটর সাইফুল। তবে একই ভাবে অভিযোগে বর্ণিত ঘটনার তারিখ এবং সাক্ষীর বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনার তারিখের মধ্যে মিল পাননি ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আবারও বলেন, ‘‘এটা রিলাই করার মতো না।’’ (সোর্স: বাংলা নিউজ ২৪) কেস ৭. (আটক ও হত্যা) অভিযোগঃ রমযানের ২৭ তারিখে কামারুজ্জামান টেপু মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলামকে আটক করেন। ময়মনসিংহের গোলাপজান রোড থেকে তাদের সাথে আল বদরের সশস্ত্র ১৫-২০ জন সদস্য ছিলেন। তাদেরকে জেলা প্রসাশকের ডাক বাংলোয় আল বদর ক্যাম্পে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। পরেরদিন সকালে পিতা-ছেলের সাথে আরও ৫ জনকে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে লাইনে দাড় করান হয়। টেপা মিয়াকে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করার সময় সে নদীতে ঝাপিয়ে পরেন। আল বদরের সদস্যরা তাকে গুলি করলে তার পায়ে জখম নিয়ে পালিয়ে আসেন, কিন্তু বাকিদের সেখানে হত্যা করা হয়। মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন বলতে গেলে কোন সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণের সময় সংশ্লিষ্ট তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনালকে পড়ে শোনান প্রসিকিউটর সাইফুল। অভিযোগে বর্ণিত ঘটনা ও সাক্ষীদের বর্ণনার তারিখের মিল না হওয়া এবং ঘটনার সময় সরাসরি কামারুজ্জামানকে না দেখার কারণে ট্রাইব্যুনাল দুজন সাক্ষীর বক্তব্যে বিশ্বাস (রিলাই) রাখতে পারেননি। অন্য একজন সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, মাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে এ অভিযোগ গ্রহণ করার পক্ষে কোনো যুক্তি প্রসিকিউটরের আছে কিনা। এ সময় প্রসিকিউটর সাইফুল কাগজপত্র উল্টাতে থাকেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া খানিকটা বিরক্ত হয়ে এ সময় বলেন, ‘‘জানা থাকলে আপনি আগেই বলতেন।’’ এ সময় ‍অন্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম আবারও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আই অ্যাম কনফিউজড, মাই লর্ড।’ (সোর্স: বাংলা নিউজ ২৪) উপসংহারঃ কেস ১, এ প্রসিকিউশন আসল সাক্ষি জীবিত থাকা সত্ত্বেও হাজির করতে ব্যার্থ হয় । শোনা সাক্ষিদের অসংগতি পুর্ন সাক্ষ্য কামারুজ্জামানের অপরাধ প্রমান করে না। কেস ২ এ , ১৯৭২ সালে বাদির পরিবার কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি করেন, কিন্তু তারা এর পক্ষে কোন ডকুমেন্ট প্রদান করতে পারেনি। কিন্তু এফআইআর দ্বারা প্রমানিত হয় যে কামারুজ্জামান সে মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন না। কেস ৩ এ, প্রসিকিউশন ক্যামেরা ট্রায়াল এ সাক্ষ্য নেয়। যেখানে যা ইচ্ছা তাই লেখে দেয়া হয়। তাছাড়াও অন্যের কাছে শোনা কথা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কেস ৪ এ, ৭১ সালে ১১ বছরের ছেলে যে কিনা সরকারের অংগ সংগঠনের সাথে জড়িত , তার শোনা কথা কখনই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। কেস ৫ এ, প্রসিকিউশনের সাক্ষী ই কামারুজ্জামানের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় যা কামারুজ্জামানের নিরপরাধ হওয়ার প্রমান। কেস ৬ এবং কেস ৭, এ প্রসিকিউশন কোন সাক্ষ্য হাজির করতে পারেননি। 'আবেগ দিয়ে বিচার হয় না, বিচার হয় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে।‘মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কামারুজ্জামানের মামলায় যা আছে আবেগ আর গাল গল্প, তবে যা নেই তাহলো সাক্ষ্য প্রমাণ।’ এ থেকে প্রমান হয় যে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা কোন অভিযোগ সত্য নয়। কোন অভিযোগ ই প্রমানিত হয়নি। তাই তাকে নিঃশর্ত ভাবে বেকুসর খালাস দেয়া উচিত। নোট: লিখাটির দ্বিতীয় অংশের মুল ইংরেজি ভার্সন, http://www.kaagoj.com/details?id=179 বাংলা নিউজ ২৪ এর শিরোনাম:কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ‘কনফিউজড’ প্রসিকিউটর!, ২৭ মার্চ, ২০১৩ http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=ef149aba940706f26588cf33df2d0f9e&nttl=27032013184752 লিখাটির দ্বিতীয় অংশ লিখার ক্ষেত্রে ব্লগার এম এন হাসানের ব্লগের সহায়তা নিয়েছি। ছবি কৃতজ্ঞতা : www.facebook.com/REAL.WAR.CRIMINAL সোর্স : ফেসবুক থেকে সংগৃহিত 

No comments:

Post a Comment