Friday 28 June 2013

ভয়ঙ্কর ছাত্রলীগ


বেপরোয়া ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। সরকারি দল সমর্থিত এ সংগঠনটির নামের সঙ্গে খুন, সন্ত্রাস, সহিংসতা, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখল, এসিড নিক্ষেপ, শিক্ষক-ছাত্রী লাঞ্ছিতের ঘটনা জড়িয়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির নাম শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে। প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে সংগঠনটি। বর্তমান সরকারের ৫৪ মাসে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সহিংসতায় নিহত হয়েছে অন্তত ২২ জন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, টেন্ডারবাজী, দখলদারিত্ব এবং প্রাধান্য বিস্তারে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে অন্তত পাঁচ শতাধিক। আহত হয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশসহ প্রায় ৪ হাজার। লাঞ্ছিত করা হয়েছে শতাধিক শিক্ষক ও ছাত্রীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের গায়ে এসিড নিক্ষেপের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে সংগঠটির নেতারা। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এসব ঘটনার কোন বিচার হয় না। ছাত্রলীগের এক সময়ের নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন বর্তমান সরকারের যা কিছু অর্জন, তার সবই বিসর্জন দিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ।

মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরের পুরো সময় জুড়েই বেসামাল ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ভয়ঙ্কর কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনটির ‘সাংগঠনিক নেত্রীর পদ’ থেকে পদত্যাগ করেন। তারপরও থামানো যায়নি দেশব্যাপী সংগঠনটির তা-ব। মানুষ খুন, চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজী, ক্যাম্পাস দখল, শিক্ষক-ছাত্রী লাঞ্ছিতসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যেখানে জড়ায়নি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা বেপরোয়া রূপে আর্বিভূত হলেও রাশ টেনে ধরতে পারছে না সরকার। বরং প্রকাশ্যে দিনেদুপুরে বিশ্বজিৎ হত্যার নৃশংসতার সচিত্র খবর সারাবিশ্বের মিডিয়ায় আলোড়ন তুললেও সরকার ছাত্রলীগকে আড়াল করতে চেষ্টা করেছে। গত সাড়ে চার বছর ছাত্রলীগ যে সব অপকর্ম করেছে তারা কোনোটির বিচার হয়নি এখনো।
সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য সাময়িকভাবে কখনও কখনও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করলেও ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন কিছু দিন পরই। আর ছাত্রলীগের লাগামহীন তা-বের কারণে ক্ষমতসীন দলের নেতাসহ অন্যরা বলে থাকেন ‘যা কিছু অর্জন, তার সবই বিসর্জন দিয়েছে ছাত্রলীগ’। দেশের প্রবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ঙ্কর তা-বলীলায় অতিষ্ঠ হয়ে সংগঠন দুটির নাম দিয়েছেন টেন্ডারলীগ। একই মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। বর্তমান সরকারের গত সাড়ে চার বছরে ছাত্রলীগের কর্মকা- বিশ্লেষণ করে ও বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতায় দেখা যায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের রাত থেকেই শুরু। ওই দিন নির্বাচনের ফল ঘোষণার সাথে সাথে চর দখলের মতো দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস দখলে মেতে ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ঘটলো গত ২৫ জুন চট্টগ্রামে দুই খুনের ঘটনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সরকারের সাড়ে চার বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি, নোয়াখালী, হাজী দানেশ, যশোর বিজ্ঞান ও পযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শহরে অন্তত পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২২ জন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির নেতাকর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানুষ। প্রতিবারই এই সহিংসতার পেছনে কাজ করে কখনো চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজী, কখনও আধিপত্য বিস্তার- ভর্তি বাণিজ্য, কিংবা দলীয় কোন্দল, পদ না পাওয়া, খাবার টোকেন ও নারী। ছাত্রলীগ তা-বের সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ২৫ জুন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম রেলের দরপত্র নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গোলাগুলিতে শিশুসহ দুজন নিহত হয়। বর্তমান ছাত্রলীগের একাধিক নেতা মনে করেন নেতাকর্মীরা এখন নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ এবং সরকারের মেয়াদও শেষের দিকে তাই সময় যতই যাবে ততই এখন ছাত্রলীগ আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। এজন্য তারা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন।
নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যা কিছু অর্জন, তার সবই বিসর্জন দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অব্যাহত তা-বের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জাতীয় রাজনীতির প্রভাবে এধরনের ঘটনা বাড়ছে। জাতীয় নেতারা তাদের নিজের কাজে ব্যবহার করছে। ছাত্র নেতারা দেখছে জাতীয় নেতারা অবৈধ পথে অর্থ কামাচ্ছে এজন্য তারাও অবৈধ পথ বেছে নেয়। এ থেকে উত্তরণের জন্য তিনি ছাত্র সংগঠনগুলোর লেজুড়বৃত্তি পরিহার করা এবং ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন।
আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা ডা. মোঃ মোখলেস-উজ-জামান হিরো বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকা- দেখলে মনে হয় তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলো তা থেকে এখন তারা দুরে সরে গেছে। ছাত্রলীগের সহিংস কর্মকান্ডের কারণে বর্তমান সরকারের সাফল্য ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এখন নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয় দাবি করে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় ব্যক্তি এধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর সাথে ছাত্রলীগের কোন সম্পর্ক নেই। ছাত্রলীগের কেউ সম্পৃক্ত না। কিন্তু ঘটনার পর ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে তাহলে তারা ছাত্রলীগের কেউ কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সবাই যেহেতু মানুষ। তাই যে কেউ যে কোন সময় অপরাধ করতে পারে। নৈতিক স্থলন ঘটতে পারে। যদি কেউ অপরাধ করে আমরা তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে তার শাস্তির দাবি জানায়। যেনো আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তা নির্বিঘে করতে পারে।
সহিংসতায় নিহত ২২ 
বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রামে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সহিংসতার শিকার হলেন একজন শিশুসহ এক সাধারণ মানুষ। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় পাশের গ্রামের ১০ বছরের শিশু রাব্বি। এ ঘটনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় আলোচিত ঘটনা ঘটে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর। বিরোধী দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ওইদিন রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্বজিৎ দাসকে। শিবির কর্মী বলে শকুনের মতো ঝাপিয়ে পড়ার পর বিশ্বজিৎ দাস নিজেকে হিন্দু দাবি করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেন নি। এমনকি নিজের গোপনাঙ্গ প্রকাশ করেও নিজে হিন্দু হিসেবে প্রমাণ করার শেষ চেষ্টাও সেদিন ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগের রক্ত পিপাসুদের কাছে। ওই ঘটনা দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়। তবে ঘটনার অভিযুক্ত ২১ আসামির মধ্যে ১২ জনকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। গত বছরের ১৫ জুলাই পদ্মা সেতুর টাকা উত্তোলনের পর ভাগাভাগি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল। পরদিন ১৬ জুলাই মারা যায় ছাত্রলীগের এই কর্মী। গত বছরের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে বের হয়ে আসার পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আক্রমণের শিকার হন জোবায়ের। গুরুতর আহতাবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি মারা যান। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারো কোন শাস্তি হয়নি। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে ২ শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ও মাসুদ বিন হাবিব নিহত হয়। ২৯ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে যুবলীগ কর্মী ওয়াজেদ চৌধুরীকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত নিহত হয়। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের একক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত হয় ছাত্রদল-কর্মী আবিদুর রহমান ওরফে আবিদ। আবিদসহ কয়েকজন ছাত্রদলের কমিটি করতে চাওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেদম মারধরের শিকার হন। এর দুই দিন পর ২১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ। ১৪ সেপ্টেম্বর তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে লতিফ ছাত্রবাসের ডাইনিং-এ বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে রাইসুল ইসলাম রশিদ নামে এক ছাত্র নিহত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। মৃত্যুর পর তার রেজাল্ট প্রকাশ হলে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এই ঘটনায় করা মামলার আসামীরা সকলেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ৭ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী মারা যান। ৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে বলির শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র ফারুক হোসেন। ফারুক নিহত হওয়ার দুদিন পরেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৪ মার্চ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘর্ষের ঘটনায় যশোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন দাদা নিহত হন। ২৯ মার্চ চৌধুরী হাট রেল স্টেশনের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হারুন-অর-রশিদ কায়সারের ক্ষত-বিক্ষত লাশ। ১৩ এপ্রিল রাজধানীর আদাবরে খুন হন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা রুহিজ। ১৫ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেল ক্রসিং এলাকায় আহত হন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান গুরুতর আহত হন। পরদিন ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ১৫ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ঘৃণ্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে ছাত্রলীগ। শোক দিবসের ইফতারির টোকেন সংগ্রহকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সভাপতি আউয়াল কবির জয়ের কর্মীরা সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে হাতুড়ি ও রড দিয়ে মারপিট করে দোতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। গুরুতর আহতাবস্থায় টানা ৯ দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্তহার মানেন ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী নাসরুল্ল¬াহ নাসিম। ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র উদয়েন্দু সিংহ পলাশ নিহত হয়।
২০০৯ সালের মার্চে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ রাজীব। একই বছর ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সঞ্জয় দেবনাথ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন।
শিক্ষক লাঞ্ছিত
এই সরকারে মেয়াদে নজির বিহীন শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) নবাগত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর চন্দ্র দত্তকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে ছাত্রলীগ। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদান করতে গেলে তিনি এই হামলার শিকার হন। ২০ মে ভর্তি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজে ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে।১০ জানুয়ারি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হালায় এক নতুন অস্ত্র হাতে তুলে নেয় ছাত্রলীগ। এদিন ভিসি’র অপসারণের দাবিতে অনশনরত শিক্ষকদের উপর এসিড নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে আহত হন ১২ শিক্ষকসহ ২৫ জন। ঝলসে গেছে দুই শিক্ষকের মুখ। ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচিতে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ইবি ছাত্রলীগ। এতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. ইয়াকুব আলীসহ প্রায় ৩৫ শিক্ষক আহত হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর বুয়েটের ভিসি প্রফেসর এস এম নজরুল ইসলামের দুর্নীতির কারণে তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনতর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ কর্মীরা ভাংচুর ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে পরবর্তীতে আবার শিক্ষকদের নামে মামলা করে। ২৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর শরীফ এনামুল কবিরের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। গত বছর ১ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মিন্টু আলী বিশ্বাসসহ ৪ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। ২ জানুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ভোজে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করলে আয়োজক কমিটির সদস্য ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। একই সময় ভিসির বাসভবনে হামলা করে ছাত্রলীগ।১৫ ডিসেম্বর খুলনায় হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় অধ্যক্ষসহ ৫ শিক্ষক আহত হন। গত বছর ৮ আগস্ট ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ২০ জন শিক্ষক আহত হন। খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ২ জন শিক্ষককে মারধর করে ছাত্রলীগ। ঢাকা কলেজে ভর্তিবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। ১৩ নভেম্বর বরগুনার আমতলী উপজেলার একটি মাদরাসার একজন শিক্ষককে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ খাবারের জন্য অতিরিক্ত টোকেন চেয়ে না পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি রেজা সেকেন্দার হল প্রভোস্ট প্রফেসর আজিজুর রহমানসহ আবাসিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে। ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ২৩ নভেম্বর ইউনিফর্ম ছাড়া এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে না দেয়ায় নোয়াখালী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জুলফিকার হায়দারকে ছাত্রলীগ নেতা সোহরাব ইকবাল লাঞ্ছিত করে। ২২ জানুয়ারি মধ্যরাতে স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাদের আবাসিক মেয়াদ শেষ হওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হাতে তিন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়। ২২ মার্চ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষসহ তিনজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা।
২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষককে। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
ছাত্রী লাঞ্ছিত 
আওয়ামী সরকারের সাড়ে চার বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ জানুয়ারি রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে মধ্যরাতে ছাত্রী হোস্টেলে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় আহত হন ১০ ছাত্রী ও ইন্টার্নি চিকিৎসক। ১৬ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ কর্মীর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন দুই ছাত্রী। ২৩ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের মাস্টার্সের ও প্রীতিলতা হলের এক ছাত্রী ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন। গত বছরের ৩ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি নেয়ার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা ব্যাংক অবরোধ করতে গেলে ছাত্রলীগ তাতে হামলা করে। এতে তাদের ৫ ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়। ২০১২ সালের ১২ মে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র ও এক ছাত্রীর মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ। ৪ জুন কুষ্টিয়া ডিগ্রি কলেজের ৬ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রফ্রন্টের অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলায় এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়।
২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমূল হুদা পলাশের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নৃত্যশিল্পী। রাত ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে ওই নৃত্যশিল্পীকে স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতা পলাশ ও জুয়েল হাসান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বৈশাখী অনুষ্ঠান ও থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠানে অন্তত ২০ জন নারী ও ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়। বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রলীগ কর্মী একজন ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে হামলা চালিয়ে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত ও ১০ ছাত্রীকে আহত করে ছাত্রলীগ। ২৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২ অক্টোবর বরিশালের মুলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করেছে দুই বোনকে।
ভয়াবহ সংঘর্ষ 
সরকারের বর্তমান মেয়াদে ছাত্রলীগের লাগামহীন তা-বের কারণে সারাদেশে অন্তত পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীরা। গত বছরের ৯ জুলাই সিলেটের ১২০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে ছাত্রাবাসে আগুন দিয়ে উল্লাস করে। ৬ মে পুলিশ ঢাকা কলেজের আবাসিক হলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। ১৩ মার্চ রাজধানীর নীলক্ষেতে হোটেলে ফাও খাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত-নিউমার্কেট এলাকা। সংঘর্ষের সময় ৮-১০ রাউন্ড গুলি ও ১০-১৫টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়কের পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র। গত ৩ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দোকান দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আল বেরুনী হলের ৪ তলা থেকে ৭-৮জন ছাত্রকে ফেলে দেয়া হয়। একই বছর ১৪ আগস্ট কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হন। একই বছর ২৬ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১শ’ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়। অভ্যন্তরিন সংঘাতের পাশাপাশি সারাদেশের সরকারি দফতরের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছাত্রীদের অবৈধ কাজে বাধ্য করা এবং ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে ইডেন কলেজে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করার পর কমিটির নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ওই হামলায় তৎকালীন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গুরুতর আহত হন। ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষে বন্ধ হয়েছে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বুয়েট, জাহাঙ্গীর নগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, কুমিল্লা, বেগম রোকেয়া, নোয়াখালি, হাজী দানেশ, শাহজালাল, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সোহরাওয়ার্দী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রুয়েট, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজসহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। আর তাদের অভ্যন্তরীন সংঘর্ষে এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলায় একাধিকারবার বন্ধ হয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।



No comments:

Post a Comment