Friday 20 September 2013

বাম রাজনীতি থেকে পুরোদস্তুর ভোগবাদে

 দিলীপ বড়ুয়া। জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে দিয়েছেন মেহনতি মানুষের জন্য সংগ্রাম করে। তিন তিন বার নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রতিবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার। রাজনীতির মাঠে সাম্যবাদের ঝাণ্ডা ওড়ানো এই নেতার পরিচিতি ছিল এক সময় সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক হিসেবে। রাজধানীতে থাকতেন ভাড়া বাসায়। আর এখন! এই বাম রাজনীতিক পুরোদস্তুর ভোগবাদে বিশ্বাসী। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় অন্তত চারটি প্লটের মালিক তিনি। তার রাজনৈতিক দর্শনই যেন পাল্টে গেছে ক্ষমতার পালাবদলে। অবিশ্বাস্যভাবে বদলে গেছে তার ভাগ্যের চাকা। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এখলাসুর রহমানকে ‘হত্যা’ ও নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করাসহ নানা অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেন দলটির রাজশাহী অঞ্চলের নেতারা বছর খানেক আগে। দীর্ঘদিন ধরে দলে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তারা বলেন, সমালোচনা করায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড নুরুল ইসলামকে পলিটব্যুরো থেকে দিলীপ বড়ুয়া অপসারণ করেন। অপসারণ করেন কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড ডা. জমির ও শহীদ উদ্দিন মাস্টারকে। পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটিও বাতিল করে দেন। তিনি নিজেকে সৎ বলে মুখে ফেনা তুললেও শ্রমিক নেতাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মন্ত্রী।
ওদিকে, মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী হয়ে এখন তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা রাজউক-এর বিভিন্ন প্রকল্পে একাধিক প্লটের মালিক। মন্ত্রিত্ব লাভের পর একবার যমুনা সার কারখানা থেকে গাড়ি নিয়েছিলেন উপঢৌকন হিসেবে। সমালোচনার মুখে তিনি তা ফেরত দেন। তবে এখন তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগের ডালপালা মেলেছে। অভিযোগ উঠেছে, বৌদ্ধ মন্দিরের নামে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখলের। মন্ত্রিসভার একজন সৎ সদস্য হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করলেও এখন মানুষ আর তার সততার কথা বিশ্বাস করতে চান না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় তিনি মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। এটা অবশ্য তিনি সবসময় বলেও বেড়ান। দিলীপ বড়ুয়ার ভাষায়, মহাজোট নেত্রী তাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি (দিলীপ) যদি নির্বাচন না করেন তাহলে তাকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হবে। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, শেখ হাসিনা তার সেই কথা রেখেছেন এবং তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেকে মন্ত্রী বলতে চান না, বলেন জনগণের সেবক। সেই সেবকই এখন দলীয় কমরেড হত্যা, জমি দখলসহ সরকারি একাধিক প্লটের মালিক হয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
মন্ত্রী ও পরিবার সদস্যদের চার প্লট: অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে যার মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না- থাকতেন ভাড়া বাসায়, এখন সেই সাম্যবাদী নেতা দিলীপ বড়ুয়াই রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় অন্তত পাঁচটি প্লটের মালিক। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)লউত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া এ প্লটগুলোর মধ্যে মন্ত্রীর নিজের নামে আছে দু’টি প্লট। মেয়ে ডা. উপমা বড়ুয়ার নামে তিন কাঠা এবং ভাই ডা. অলক বড়ুয়ার নামে আছে তিন কাঠার প্লট। স্ত্রী অধ্যাপিকা তৃপ্তি রানীর নামেও পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেয়া হয়। পরে তা বাতিল করা হয় বলে দিলীপ বড়ুয়া দাবি করেন।
এসব প্লটের সবই মন্ত্রী নিয়েছেন নিজের প্রভাব খাটিয়ে এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। এর সত্যতাও পাওয়া গেছে রাজউক-এর বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত থেকে। রাজউক সূত্র জানায়, দিলীপ বড়ুয়া শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পর প্রথম সরকারি প্লট পান রাজউক-এর উত্তরা প্রকল্পে। সেখানে তার নিজের নামে পাঁচ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় রাজউক-এর টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্টের ১৩-এ (সি) ধারার আওতায়। সংরক্ষিত কোটা থেকে বরাদ্দ দেয়া প্লটের জন্য আবেদনের প্রয়োজন হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালে রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে জমি বরাদ্দের ঘোষণা দিলে সেখানে আবেদন করেন মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, তার স্ত্রী অধ্যাপিকা তৃপ্তি রানী, মেয়ে ডা. উপমা বড়ুয়া এবং ভাই ডা. অলক বড়ুয়া। মন্ত্রী নিজেসহ তার স্ত্রী, সন্তান ও ভাইয়ের নামে পূর্বাচলে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা এবং রাজউক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী ও তার পরিবারের নামে এই জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে সকল নিয়ম-নীতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংরক্ষিত কোটা থেকে মন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর রাজউক’র ১২তম বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- প্রশা-৬/রাজ-২২/২০০৬/৭৭০ তারিখ, ১৫/১২/২০১১ এর মাধ্যমে ১৩ এ (সি) ধারার সুপারিশ মোতাবেক সরকারের সংরক্ষিত কোটা হতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মোট ২২ জনকে বিভিন্ন আয়তনের ২২টি প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৩-এ (সি) ধারার সুপারিশ অনুযায়ী সংরক্ষিত কোটায় মোট ২২ জনকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ২২ জনের মধ্যে ক্রমানুসারে তিন, চার ও পাঁচ নম্বর তালিকায় মন্ত্রী পরিবারের তিন সদস্যের নাম রয়েছে। তিনজনই শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে মন্ত্রীর স্ত্রী অধ্যাপিকা তৃপ্তি রানীর নামে বরাদ্দ দেয়া হয় পাঁচ কাঠার একটি প্লট। মন্ত্রীর মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী ডা. উপমা বড়ুয়ার নামে বরাদ্দ দেয়া প্লটের আয়তন হচ্ছে তিন কাঠা এবং দিলীপ বড়ুয়ার ভাই ডা. অলক বড়ুয়ার নামে দেয়া হয়েছে তিন কাঠা। মন্ত্রী পরিবারের এ সদস্য মিলে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে মোট বরাদ্দ পাওয়া প্লটের পরিমাণ ১১ কাঠা। পূর্বাচলে বর্তমানে জমির যে মূল্য তাতে এই ১১ কাঠা জমির দাম অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, দিলীপ বড়ুয়া ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে প্লট দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটেছে। সরকারি নিয়মানুযায়ী কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা এমপি একটির বেশি সরকারি প্লট পাওয়ার বিধান না থাকলেও দিলীপ বড়ুয়া তার পরিবারের সদস্যরা একাধিক প্লট নিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী মন্ত্রী যদি সরকারি কোন প্লট পান তাহলে তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্য কোন সদস্য প্লট পাবেন না। এমনকি মন্ত্রী নিজেও দ্বিতীয় দফায় আর কোন প্লট পাবেন না। কিন্তু শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার ক্ষেত্রে কেন এ নিয়ম মানা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজউক সংরক্ষিত কোটায় তার নামে প্লট দেয়ার পাশাপাশি তার পরিবারের অপর সদস্যের নামেও প্লট দিয়েছে। মন্ত্রী তার নিজের নামে আরও একটি প্লট নিয়েছেন কেরানীগঞ্জে রাজউক-এর ঝিলমিল প্রকল্পে। এখানে তার নামে বরাদ্দ দেয়া প্লটে জমির পরিমাণ তিন কাঠা। বর্তমান বাজারমূল্যে এর দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। এর বাইরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে আরও পাঁচ কাঠার একটি প্লটের জন্য মন্ত্রী আবেদন করেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, দিলীপ বড়ুয়া ও তার পািরবারের সদস্যদের প্লট পাওয়ার ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।
জমি দখলের অভিযোগ: গত বছর তার ইশারায় রাজধানীর সবুজবাগে বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় এক ব্যক্তির জমি দখল করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই জমির মালিক মো. আবদুল হামিদ অভিযোগ করেন, বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন ছয় কাঠা জমিটি তার। সেখানে গত বছর ১৪ই মে ঢাকা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কোনরকম পূর্ব নোটিশ ব্যতীত ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদের নেতৃত্বে ওই জমি থেকে হামিদের পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। ওই সময় তিনি নোটিশ দেখতে চাইলে পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে হামিদ ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই উচ্ছেদ অভিযানের সময় মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বৌদ্ধ মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন। হামিদের অভিযোগ, তাদেরকে ওই দিন এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। তিনি জানান, গত ৫০ বছর ধরে তিনি এই জমির কর দিয়ে আসছেন। অথচ হঠাৎ করেই তাকে উচ্ছেদ করা হয়।
এখন যেখানে বৌদ্ধমন্দির সিএস রেকর্ডে সেই জমির মূল মালিক ছিলেন রাধাশ্যাম সাহা। এখানে সর্বমোট সাড়ে ১৭ বিঘা জমি ছিল। রাধাশ্যামের কাছ থেকে হামিদের পিতা আবদুল লতিফ ও তার চাচা মো. লোকমান জমি ক্রয় করেন। ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে সরকার দুই দফায় সাড়ে ১৩ বিঘা (সাড়ে চার একর) জমি অধিগ্রহণ করে বৌদ্ধমন্দির নির্মাণের জন্য বৌদ্ধদের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর বাকি সাড়ে চার বিঘা জমির মধ্যে রাস্তাসহ অন্যান্য কাজে সরকার আরও দুই বিঘা জমি নিয়ে নেয়। বাকি থাকে প্রায় ছয় কাঠা জমি। ওই জমিতেই নির্মিত বাসায় এত বছর ধরে বসবাস করছিলেন আবদুল হামিদ। বাসার সামনে তার একটি দোকানও ছিল। কিন্তু গত বছর ১৪ই মে বাসা ও দোকান দুই-ই হারান তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একবার তাকে উচ্ছেদ করে জমিটি দখলের চেষ্টা করা হলে তিনি উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। আদালত উচ্ছেদের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেয়। এটি বহাল আছে। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
সার কেলেঙ্কারি: সার কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়ে পড়ে শিল্প মন্ত্রণালয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুইস সিঙ্গাপুর ওভারসিজের মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার নষ্ট সার আমদানি করে মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার নির্দেশে তা আনলোড করা হয়। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২২তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, প্রায় ২০০ কোটি টাকার নষ্ট সার নিয়ে লুকোচুরি করে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ সার গ্রহণ না করার জন্য সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করলেও সার সম্পূর্ণ আনলোড করা হয়। এ ব্যাপারে বিতর্কিত আমদানিকারকের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ারও চেষ্টা করা হয়। কমিটির সদস্যরা বলেছিলেনন, এ সার নিলে কৃষক ঠকবে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তাই এ সার গ্রহণ করা ঠিক হবে না। গত বছর ১৬ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ২২তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে আরও জানা গেছে, নষ্ট সার সম্পর্কে সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ৯ জন দিয়ে কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও গঠন করা হয় মাত্র ৫ জন দিয়ে। তাছাড়া কমিটিতে যেসব কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তারা অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এ ক্ষেত্রে বুয়েটের বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল রিপোর্ট কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি। তিনি বলেন, মাসের পর মাস সিইউএফএল’র মাঠে সার ফেলে রাখা হয়। ফলে সার পাথরে পরিণত হয়েছে। এ সার নিয়ে কৃষক ঠকবে।
৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া ও হত্যার অভিযোগ: বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এখলাসুর রহমানকে ‘হত্যা’ ও নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করাসহ নানা অভিযোগে বছর খানেক আগে তার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন দলটির রাজশাহী অঞ্চলের নেতারা। রাজশাহী প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের রাজশাহী জেলা শাখার সদস্য কমরেড এরশাদ আলী, কমরেড কাবিল উদ্দিন, কমরেড মনিরুজ্জামান, কমরেড ওসমান গনি, কমরেড বাসন্তী রানী, কমরেড সাজ্জাদ আলী, কমরেড নওশাদ আলী ও কমরেড গোলাম মর্তুজা মুরাদ। এখলাসকে দিলীপ বড়ুয়াই ‘হত্যা’ করেছেন বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। তারা আরও বলেন, দিলীপ বড়ুয়াা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘আমার নেত্রী’ বলে পত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছেন। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে তার পদত্যাগ করা উচিত। রীতি অনুযায়ী কোন বাম প্রগতিশীল নেতা দুই দেশের নাগরিক হতে পারেন না। অথচ দিলীপ বড়ুয়া আমেরিকারও নাগরিকত্ব নিয়েছেন।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের রাজশাহী জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমরেড মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, পাঁচ সদস্যের রাজশাহী মহানগর কমিটির সবাই ও জেলা কমিটির ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই এসব অভিযোগের সঙ্গে একমত। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এসব ওপেন-সিক্রেট। আমরা অসংখ্যবার এসব অভিযোগ নিয়ে দলীয় সভায় আলোচনার চেষ্টা করেও কোন ফল হয়নি। তিনি অবিলম্বে দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রিসভা থেকে দিলীপ বড়ুয়ার পদত্যাগ দাবি করেন।
কমরেড নুরুল ইসলামের যত অভিযোগ: দিলীপ বড়ুয়াকে ‘চরম সুবিধাভোগী’ আখ্যা দিয়ে মানবজমিনকে কমরেড নুরুল ইসলাম বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা তিনি করেন না। দিলীপ বড়ুয়া দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে আছেন এমন অভিযোগ এনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, শত শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই দলটি এখন তার ‘পকেট পার্টি’ হিসেবে পরিচালনা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র চলছে দলে। সমালোচনা করায় কোন ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পলিটব্যুরো থেকে দিলীপ বড়ুয়া অপসারণ করেন। আর এখন পলিটব্যুরোতে যে ক’জন আছেন সবাই তার তোষামোদি করেন। আরও অপসারণ করেন কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড ডা. জমির ও শহীদ উদ্দিন মাস্টারকে। দিলীপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তার আর ক্ষমা নেই। কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড ডা. জমিরকে দল থেকে অপসারণ করায় তিনিও গত বছর ঈদুল আযহার দিন স্ট্রোক করে মারা যান। কমরেড ডা. জমিরের পোস্টার ছাপিয়ে রামগতিতে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি স্মরণসভা করতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও এসপিকে দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা পণ্ড করে দেন দিলীপ বড়ুয়া। কমরেড নুরুল ইসলাম দাবি করেন, ঢাকায় বস্তি থেকে লোক ভাড়ায় এনে দল চলে। সাম্যবাদী দলের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল লক্ষ্মীপুর জেলা। আর তাই লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটি ভেঙে দেন মন্ত্রী। ভেঙে দেন রামগতি কমিটি-ও। নিজেকে সৎ বলে বাহবা নিলেও শ্রমিক নেতাদের চাকরি দেয়ার কথা বলে কমরেড এখলাসের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। কিন্তু একজনকেও চাকরি দেননি। টাকাও ফেরত দেননি। কি করে এখলাস শ্রমিকদের এতগুলো টাকা ফেরত দেবেন? টাকার শোক সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা যান একদিন।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া যা বললেন: সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ডা. জমির আমাদের দলে নেই, তাই দলের নাম ব্যবহার করে কেউ পোস্টার ছাপিয়ে স্মরণ সভা করতে পারেন না। এ কারণে হয়তো পুলিশ তাদের বাধা দিয়েছে। কমরেড এখলাসের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া এবং টাকার শোক সহ্য করতে না পেরে তার স্ট্রোক করে মারা যাওয়া প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেন, তার পরিবার তো অভিযোগ করেননি। তাছাড়া তার মেয়েকে আমার মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়েছি। কমরেড নুরুল ইসলামকে পলিটব্যুরো থেকে অপসারণ প্রশ্নে তিনি বলেন, দল যখন ছোট ছিল তখন তাদের প্রয়োজন ছিল। এখন দলে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এছাড়া তিনি দলের নিয়ম-কানুন মেনে চলেননি বলে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন দলিল লেখক। আর শহীদ উদ্দিন মাস্টার ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের অপকর্ম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। আপনি ও আপনার পরিবারের সদস্যদের নামে চারটি প্লট নিয়েছেন- এ প্রসঙ্গে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়, আমি মন্ত্রী হিসেবে একটি প্লট পেয়েছি। আর আমার স্ত্রী অধ্যাপিকা তৃপ্তি রানীর নামে পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার যে প্লটটি বরাদ্দ দেয়া হয় তা বাতিল করে দিয়েছি। আপনার মেয়ে ডা. উপমা বড়ুয়া এবং ভাই ডা. অলক বড়ুয়াও প্লট পেয়েছেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার মেয়ে এখন বিবাহিতা। তার স্বামী আছে। তার নামে প্লট থাকতেই পারে। রাজধানীর সবুজবাগে বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় ছয় কাঠা জমি দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সরকারি আদেশেই জমিটি নেয়া হয়েছে মন্দিরের জন্য। সেখানে আমার কোন হাত ছিল না। ২০০ কোটি টাকার সার কেলেঙ্কারি নিয়ে অপর এক প্রশ্নে দিলীপ বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, তোফায়েল ভাই এ বিষয় সংসদীয় কমিটিতে কেন যে বললেন বুঝতে পারছি না। তবে ওই সার যে নষ্ট নয় তা বুয়েট পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে এবং বিতরণও করা হয়েছে। কৃষকদের কোথাও কোন সমস্যা হয়নি।

No comments:

Post a Comment