Sunday 29 September 2013

যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনা সরকারের কোটি টাকার লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ

 যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরির জন্য ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের কথা স্বীকার করেছেন।

এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

ইংরেজি দৈনিক ‘নিউএজ’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে রবিবার এই তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। ‘গভর্নমেন্ট অ্যাপয়েন্টস ইউএস লবিইং ফার্ম টু সাপোর্ট আইসিটি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৫ মাসের জন্য যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে কাজ করবে বিজিআর পাবলিক রিলেশন্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া প্রতিবেদনে বিজিআর জানায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের চুক্তি হয়েছে।

ওই চুক্তির চারদিন পরাই জামায়াতের ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে এক নজিরবিহীন রায়ে ফাঁসি দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট।

চুক্তিতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে লবিইং করার জন্য আগামী ৫ মাস বাংলাদেশ সরকার বিজিআরকে প্রতি মাসে ২০ হাজার ডলার করে মোট ১ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০ লাখ টাকা দেবে।

এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত কাজে কোনো ভ্রমণ প্রয়োজন হলে তার সমুদয় খরচ বহন করবে সরকার। প্রয়োজনে চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৩৮ সালের আইন অনুসারে সেদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের দেশের বাইরের কারও পক্ষে লবিং করার জন্য চুক্তি করা হলে তার বিস্তারিত তথ্য বিচার মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হয়।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের এবং বিজিআরের প্রেসিডেন্ট জেফরি এইচ বার্নবাউম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

কৌশলগত যোগাযোগ, জনমত গঠন, বিদেশি সরকারের প্রতিনিধিত্বসহ গণসংযোগের নানা কাজে নিজেকে বিশ্বমানের বলে দাবি করেছে বিজিআর।

বিজিআরের প্রেসিডেন্ট জেফরি এর আগে ফক্সনিউজ এবং ওয়াশিংটন পোস্টে কাজ করেছেন।

লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের কথা স্বীকার করে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ শনিবার নিউএজ- কে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মত প্রভাবশালী দেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা সামাল দিতেই সরকারকে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিতে হয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘এর আগে ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক রং দিতে জামায়াতে ইসলামী প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে।’

নিউএজ জানায়, ২০১১ সালের অক্টোবরে তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়। তবে এজন্য আড়াই কোটি ডলার খরচ করা হয়েছে বলে যে তথ্য সরকার প্রচার করেছে প্রকৃত খরচ তার চেয়ে অনেক কম।

শফিক আহমেদ দাবি করেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার কোনো রাজনৈতিক জিঘাংসা নেই। তিনি বলেন, যখন অনেকগুলো রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে সেই মুহূর্তে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ সময়োচিত হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিজিআরের অনুকূলে সম্প্রতি ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ সরকার যেসব তথ্য অতি গোপনীয় হিসেবে চিহ্নিত করত তা অতি গোপনীয় রাখবে বিজিআর।

উল্লেখ্য, যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

এ অবস্থায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিচারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠনগুলো সুপ্রিমকোর্টে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের কড়া সমালোচনা করেছে।

যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যা পও বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবশ্যই আপিল বা রিভিউ করার সুযোগ থাকতে হবে।
http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/1/71010#.UkgLcIZ6ZVK

No comments:

Post a Comment