Tuesday 29 October 2013

পার্বত্য চট্রগ্রামকে পুর্ব-তিমুর/দক্ষিণ সুদানের মতো বিচ্ছিন্ন করে আরেকটি ইসরাইল বানানো হবে ?


ছবিঃ দেশের এক-দশমাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কি পুর্ব-তিমুর, দক্ষিন সুদানের মতো বিচ্ছিন্ন করা হবে নাকি আরেকটি ইসরাইল বানানো হবে

আমাদের ক্লাসের সুদানী মেধাবী মেয়ে রাগাত। বাবা-মায়ের সাথে সৌদিতে পড়ালেখা করলেও এখন মাষ্টার্স ছাত্র হিসেবে পড়াশুনা করে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ইউনিভার্সিটিতে। গত মধ্য ফ্রেব্রয়ারীতে তিউনেশিয়া, মিশর বিপ্লবের তাজা ও উদ্দিপনামুলক খবরের মাঝেও তার মন বেশ খারাপ। কারন জিজ্ঞেস করলেই বললো, বিশাল সুদানকে ভেজ্ঞে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। শুধু মাত্র খৃষ্টান অধ্যুষিত হওয়ার কারনেই দক্ষিণ সুদানকে পশ্চিমা শক্তি আলাদা করে এককালের আফ্রিকার বৃহত দেশ (আয়তনে) সুদান ভেজ্ঞে দুর্বল করে ফেললো। রাগাত আরো জানালো, দক্ষিণ সুদানে অনেক খনিজ সম্পদ আছে যা নিয়ন্ত্রন করার জন্য দেশটিকে বহুবছর থেকে পশ্চি্মা খৃষ্টানরা নানা প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধর্মান্তরিকরনের কাজটি করেছে। দক্ষিণ সুদানকে বিশ্বমোড়ল একদিন স্বাধীন করেই দিবে এটা এতোদিন আমরা বিশ্বাস করতে ও বুঝতে না পারলেও এখন বুঝি।যখন বুঝি, তখন কিছুই করার নেই। এরা আসলেই আমাদের টুকুরো টুকরো করার জন্য এতোদিন ধরে কাজ করেছিল।


বাসার ফিরতে ফিরতে রাগাতের কথাই ভাবছিলাম। মনে হলো, তার কাছে থেকে দক্ষিণ সুদান সম্পর্কে আরো কিছু জেনে নেই। সাথে মনে পড়ে গেল দুবছর আগে, আমাদের পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে আরেকটি পুর্ব-তিমুর বানানো আশংকার কথা, যা নিয়ে সেই সময় সোনার বাংলাদেশ ম্যাগাজিনে একটি লেখাও লিখেছিলাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম কি পূর্ব তিমুরের মতো স্বাধীন হতে যাচ্ছে? দেখুন এখানে,http://www.sonarbangladesh.com/article.php?ID=1136 । দৈনিক নয়া দিগন্ত সেটা ছেপেও ছিল, দেখুন এখানে, http://www.dailynayadiganta.com/2009/08/25/fullnews.asp?News_ID=164028&sec=6 । সেটিওকেই রিভাইজ করে মুলত আজকের লেখা।

দেশের এক-দশমাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। শুরু থেকেই সেখানে বাংলা ভাষাভাষী ও পাহাড়ি লোকেরা পাশাপাশি বসবাস করছে। পাশাপাশি বসবাসের পরও সেখানে বাঙালি-পাহাড়িরা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য সব সময় বজায় রেখেছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে পাহাড়িদের সে অধিকারে কখনোই কেউ হস্তক্ষেপ করেনি। পাহাড়ি জনপদে মাঝে মাঝেই কিছু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি দেশের ভূখণ্ডগত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীও। পার্বত্য এলাকা হওয়ায় এবং দুটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় জায়গাটির কৌশলগত গুরুত্বও অনেক।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরেই বিগত আমলের কথিত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়নসহ একটি সম্পূর্ণ ব্রিগেড এবং ৩৭টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বলা হচ্ছে, শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সাপেক্ষে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আরো ৩৫টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প এবং তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়নসহ একটি সম্পূর্ণ ব্রিগেড প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে এটিই হবে সর্ববৃহৎ এবং উল্লেখযোগ্য সেনা প্রত্যাহার।


ছবিঃ ধারনা করা হচ্ছে কৌশলগত কারনের পাশাপাশি, পার্বত্য চট্রগ্রামের এই নয়নাভিরাম দৃশ্যের নিচে আছে অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ

কিন্তু কোনো কথাবার্তা আলাপ-আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ কেন এত তাড়াহুড়ো করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হলো। এর পেছনে কোনো পর্যায় থেকে কি কোনো চাপ বা বাধ্যবাধকতা আছে? অনেকে বলছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এবং তৎপরতা মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিকট ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থানান্তরিত হবে। আমরা খারাপ দিন অতিক্রম করছি এবং ভবিষ্যতে আরো খারাপ দিন আসছে। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভেতরেই পাহাড়িদের আরেকটি রাষ্ট্র বানিয়ে দেয়া হলো। মাত্র ২০ বছরের মাথায় পূর্ব তিমুরকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আলাদা করে দিয়ে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে একটি আলাদা রাষ্ট্র করে দেয়া হয়। কারণ, পূর্ব তিমুরের অধিকাংশ মানুষ খ্রিষ্টান। এভাবেই হয়ত আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব তিমুরের মডেলে স্বাধীন করে দেওয়া হবে।
এগুলো এতো দিন ছিল জল্পনা-কল্পনা। এনিয়ে খোদ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আশংকা প্রকাশ করেছে আনুষ্টানিকভাবে, দেখুন দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত আজকের (১০ এপ্রিল ২০১১)
সেনা সদরের সতর্কবাণী : পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন পূর্ব তিমুর না হয়
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/04/10/76279

১. পার্বত্য চট্টগ্রাম অদুর ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে তার একটা ধারনা পেতে নিচের কিছু টুকরো খবরের দিকে নজর দিতে হবে।
ক. বাংলাদেশের ভিতর থেকে ইসরাইলের মতো আলাদা রাষ্ট্র হবে?
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের আলাদা রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা চেয়ে সিআইএর কাছে চিঠি দিয়েছেন মাইনরিটি কংগ্রেস পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পাদক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার। ভারতের পূর্ব সীমানা সংলগ্ন বাংলাদেশ ভুখন্ডে ইরাকের কুর্দিস্তানের অনুরূপ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের জন্য একটি পৃথক স্বায়ত্তশাসিত সংখ্যালঘু এলাকা প্রতিষ্ঠায় মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর সহায়তা চেয়েছে দলটি। সাবেক ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার গত ২৭ জুলাই ২০০৭ এক ই-মেইল মেসেজের মাধ্যমে সিআইএ পরিচালকের কাছে এই সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে সেফটিক ভালভ। তাই �আজ আমাদের সাহায্য করো, আগামীকাল আমরা তোমাদের সহায়তা করবো। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে নাৎসি জার্মানির পরাজয় ও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল রাষ্ট্রের সৃষ্টি। গত প্রায় ৬০ বছর যাবৎ এই ইসরাইল মৌলবাদী আরব রাষ্ট্রগুলো ও গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্যের মধ্যে সাফল্যজনকভাবে একটি বাফার রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করে আসছে। যদি ইসরাইল না থাকত, তাহলে এর মধ্যেই আরবরা পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে আরেকটি ক্রুসেড বা মহাযুদ্ধ চাপিয়ে দিত।
ই-মেইল বার্তায় আরও বলা হয়, সিআইএর সামনে বাংলাদেশে দুটি পথ রয়েছে। এ দুটি পথ হচ্ছে- হয় বাংলাদেশকে বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের জন্য চাপ দাও, অথবা কুর্দিস্তানের মতো পূর্ব ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সংখ্যালঘুদের জন্য একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র গঠন কর। যদি এই দল ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে রাজনৈতিক ও আর্থিক সাহায্য পায়, তাহলে তারা সহজেই এটা পালন করেতে পারবে। (আমার দেশ, ১২ নভেম্বর ২০০৭)

খ. পার্বত্য চট্টগ্রামে পাচ ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের গোপন বৈঠক
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৫টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা ২০০৭ সালে রহস্যজনকভাবে পার্বত্য সফর করেন। ২০ থেকে ২২ মার্চ ২০০৭ পর্যন্ত ৩ দিন ফ্রান্স, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক ও জার্মানির রাষ্ট্রদূতরা পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যান। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা হয়নি। সফরকালে রাষ্ট্রদূতরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি (জেএসএস) ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সঙ্গে দুদফা গোপন বৈঠক করেন। বৈঠককালে জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা রুপায়ন দেওয়ানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক হারুনুর রশিদ খান ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৫টি দেশের রাষ্ট্রদূতের পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূতরা আমাদের কাছে শুধু নিরাপত্তা চান। তারা আমাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে রয়েছেন ডেনমার্কের জেনসন, নেদারল্যান্ডের মেজিংন্ডার, সুইডেনের ব্রিট হারসন, ফ্রান্সের জেকস এন্ডার, জার্মানির ফ্রাঙ্ক মিয়াকি। এদের নেতৃত্বে ছিলেন ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ইসি ডেলিগেশন ড:স্টিফেন প্রোইন। জানা গেছে, ২০ মার্চ বিকাল ৩টায় ও ২১ মার্চ বিকাল ৫টায় জেএসএস নেতাদের সঙ্গে তারা দুদুফা মিটিং করেন। ২২ মার্চ এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করেন। ৩টি বাঙালি এনজিওকে আমন্ত্রণ জানালেও রহস্যজনক কারণে মতবিনিময় থেকে তারা বিরত থাকে। বাঙালি ৩টি এনজিও হচ্ছে পাহারা, গেস্নাবাল ভিলেজ ও সাইনিং হিল। (আমার দেশ, ৩১ মার্চ ও ৪ এপ্রিল ২০০৭)

গ. পাহাড়ি জনপদে খ্রিষ্ট্রধর্মে ধর্মান্তরিত করার হিড়িক
নতুন সমস্যা ধর্ম পরিবর্তন, পাহাড়ি জনপদে- ২ তৌফিকুল ইসলাম বাবর প্রেরিত দৈনিক সমকালের এক রিপোর্টে বলা হয়, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে শত শত উপজাতীয় লোক ধর্মান্তরিত হচ্ছে। পাংখোয়া, লুসাই ও বোমাংসহ আরো অনেক উপজাতীয় মানুষের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে। কিছুসংখ্যক চাকমাও আদি ধর্ম ছেড়ে গ্রহণ করেছে খ্রিষ্ট্রধর্ম। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধে বাঙালি-পাহাড়িদের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্তিতিতে অস্থির রয়েছে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম। তার ওপর গহিন অরণ্যে পাহাড়িদের মধ্যে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন উপজাতি নেতারা। কারণ এতে পাহাড়িদের মধ্যেই সম্প্রীতিতে ফাটল ধরছে। উপজাতি নেতাদের অভিযোগ, গহিন অরণ্যের দরিদ্র লোকদের ধর্মান্তরিত হতে প্রলোভন দেখিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ কাজে জড়িত কিছু এনজিও, মিশনারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের ধর্মান্তরের ঘটনা বেশি। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানেও আছে। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য রুইথি কারবারি সমকালকে বলেন, সেবার নামে এসে পাহাড়িদের ধর্মান্তরিত করতে প্রকাশ্যে কাজ করছে কিছু এনজিও, মিশনারি সংস্থা। ধর্মান্তরিত করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে দরিদ্র মানুষদের দুবর্লতাকে। ইতিমধ্যে তাদের প্রলোভনের টোপ গিলেছে বহুসংখ্যক পাংখোয়া, লুসাই, বোমাং এবং কিছুসংখ্যক চাকমা ধর্মাবলম্বী অন্যান্য উপজাতিকে টাগের্ট করেও সংস্থা গুলো কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ পর্যন্ত কত লোক আদি ধর্ম ছেড়ে খিষ্ট্রান হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ হিসাব বলা মুশকিল। তবে ধর্ম পরিবর্তনের ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে কোনো না কোনো পাহাড়ি জনপদে। সংখ্যাটা বড়ই হবে।
তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে ১৪টি জাতিসত্তা। এর মধ্যে চাকমা, মারমা, রাখাইন, তংচইঙ্গা, পাংখোয়া, লুসাই ও বোমাং উল্লেখযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাংখোয়া, লুসাই ও বোমাং উপজাতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক লোক ধর্মান্তরিত হয়েছে। খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি, বাঘাইছড়ি ও সাজেক এলাকায় গভীর পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষজনই আকৃষ্ট হচ্ছে ভিন্নধর্মে। এনজিও এবং মিশনারিদের সহায়তায় ধর্ম পরিবর্তনকারী মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে অবহেলিত এসব পাহাড়িবাসী। মিশনারিগুলো সেই দুবর্লতাকে কাজে লাগাচ্ছে। বলা হচ্ছে, খিস্ট্রান হলেই কেউ তাদের জায়গাজমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না। খিস্ট্র ধর্ম গ্রহণকারীরা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করছে বলে জানান। (সমকাল, ১০ মার্চ ২০০৮)


ছবিঃ পুর্ব-তিমুরের মত আদিবাসী ধুয়া তুলে পার্বত্য-চট্রগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা হবে?

ঘ. Free Jummaland (CHT, Chittagong Hill Tracts) in line with East Timor
পার্বত্য চট্টগ্রামকে যে আরেকটি পূব তিমুর বানানোর চেষ্টা হচ্ছে, এটা প্রথম দেখা যায় Peace Campaign Group নামের পার্বত্য বিছিন্নতাবাদীদের একটি গ্রুপের ইমেইলে ও ওয়েব সাইটে। তাদের মতে পার্বত্য অঞ্চলের গেরিলারা আবার সংগঠিত হচ্ছে একটি নতুন মন্ত্রে, আর সেটি হচ্ছে, পূব তিমুরের আদলে এলাকাটি স্বাধীন করা। ইমেইলটির কিছু অংশ দেখুন, বিশেষ করে শেষ লাইন....
(Peace Campaign Group, Fri Apr 25, 2008, Free Jummaland (CHT) in line with East Timor, Bappi Chakma, Over two and one half decades, the indigenous people of the Chittagong Hill Tracts, mostly Buddhists, Hindus and Christians by faith, fought with Bangladesh for autonomy and for protection of their distinct identity and culture threatened with extinction for the latter�s policy of so-called national integration, locally called �Islamization policy�.
The terrors unleashed by Bangladeshi military forced the indigenous people to accommodate with the state-policy of �islamization� without any protest. It is breeding new problems in the CHT which may drag Bangladesh into a vicious and long-standing cycle of violence and instability. One of such problems is, as developments suggest, regrouping of former guerrillas coupled with new and hot bloods completely dedicated to a new idea - Free CHT or Jummaland in line with East Timor)
ই-মেইলটির পুরোটি দেখুনhttp://groups.yahoo.com/group/mukto-mona/message/47958


ছবিঃ সদ্য বিচ্ছিন্ন করে ফেলা খৃষ্টান অধ্যষিত দক্ষিণ সুদান


পার্বত্য-চট্রগ্রাম পুর্ব-তিমুর হতে পারে এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন খোদ সরকারের অন্যতম শরীক
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন,
পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলেছে। আমরা এখানে পূর্ব তিমুর বা ইসরাইল হতে দিতে চাইনা। কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করবো না। বাঙালীরা এখানে থাকবে কি থাকবেনা এটা দেখা আমাদের দায়িত্ব।’ এ কথাটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে এরশাদ আর কোন কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। (সুত্র, আরটিএনএন, ১৮/০৯/২০০৯) বিস্তারিত দেখুন এখানে,http://rtnn.net/archive/details.php?id=18629&p=1&s=1

ঙ. এলাকাটিকে ধীরে ধীরে বাংঙ্গালী শূন্য করা
পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঙ্গালীদেরকে রক্ষা করার জন্য পুর্ববর্তী সরকার গুলো চালূ করেছিল গুচ্ছগ্রাম । গুচ্ছগ্রামগুলোর বর্তমান অবস্থা অকল্পনীয়। বর্তমানে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সাথে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান তাদের পালিত পশুসহ একই ঘরে পশুর মতই গাদাগাদি করে থাকছে।
পার্বত্য বাঙালিরা বলেছেন, এ অঞ্চল থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার হলে ওই এলাকায় তারা আর বসবাস করতে পারবেন না। তাদেরকে পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে হবে। এখনো বাঙালিরা পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদা দিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু সেনাবাহিনী থাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের কথায় কথায় মারধর করে না। সেনাবাহিনী প্রত্যাহার হলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের মারধর করে তাদের ভিটেমাটিছাড়া করবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।


ছবিঃ গরুর গোয়াল ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছে পার্বত্য বাংগালী জনগোষ্টি

সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের ফলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখন তাদের নিরাপত্তা কে দেবে? তারা তখন বিএসএফর আক্রমণের শিকারে পরিণত হবে। ফলে নিরাপত্তার জন্য বাঙালি রিফুজিরা ভেতরে চলে আসছে। ওই এলাকা বাঙালিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আর পার্বত্য এলাকাকে বাঙালিশূন্য করাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের লক্ষ্য। মজার ব্যপার হলো খোদ সন্তুলারমা স্বীকার করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরকার ও স্থানীয় পার্বত্য প্রশাসনক প্রচুর অর্থ দিতে চেয়েছিল, যা দিয়ে পার্বত্য বাঙ্গালীদের সরিয়ে দেশের অন্য জায়গায় পুনর্বাসন করা হয়, এনিয়ে সন্তু লারমার সাক্ষাতটির পড়ুন (প্রথম আলো, ১৬/০৮/২০০৯)। কথা হলো পার্বত্য-চট্রগ্রামে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমন কি স্বার্থ আছে যার কারনে প্রচুর টাকা ঢেলে বাংগালীদের ভিটেমাটি ছাড়া করে শুধু চাকমাদের রাখতে হবে?
কৌশলে বাঙালিদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা হচ্ছে। তাদের কোনো উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হচ্ছে না। নিজ দেশে পরদেশী হয়ে আছে। যারা এতদিন একরাতে তিন-শ ঘুমন্ত বাঙালিকে হত্যা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। এরাই যদি আবার শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়, তবে বাঙালি নিধনে কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী লাগবে না। তারাই বৈধ অস্ত্র দিয়ে সব বাঙালি নিধন করতে পারবে।
অনেকের মতে, ইউএনডিপি পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর দরিদ্র বাঙালিদের মাথাপিছু ৫ লাখ টাকা করে দিয়ে বলা হবে, তোমাদের তো এখানে কিছু নেই। থাকো কুঁড়েঘরে, চালাও রিকশা, তোমরা এ টাকা নিয়ে সমতলে চলে যাও। সেখানে তোমরা ভালোভাবে থাকতে পারবে। এভাবে কৌশলে বাঙালিদের বিতাড়ন করে সেখানে উপজাতি খ্রিষ্টানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।

চ. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচার যুদ্ধ
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচার যুদ্ধ নতুন নয়। ১/১১ পর এই প্রচারনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইন্টারনেট সহ সকল মিডিয়াতে এমন একটি ধারণা প্রচার করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ তাদেরকে পরাধীন করে রেখেছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেখানে ব্যাপক ভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছে।

২৪ এপ্রিল ২০০৯ সম্প্রীতি মঞ্চ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী ও বাঙালি অধিবাসীদের সরিয়ে আনার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে রাজা দেবাশীষ রায় বলেছেন, আদিবাসীদের সম্পত্তি তথা জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নেয়ার বিধান রহিত হওয়া উচিত। �বাংলাদেশে আদিবাসী জনগণের প্রচলিত আইনসমূহের সংক্ষিপ্তসার� শীর্ষক এ মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, বছরের পর বছর ধরে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পার্বত্য এলাকায় সামরিক বাহিনী মোতায়েন সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত।
দেখুন এখানে,http://www.dailynayadiganta.com/2009/04/25/fullnews.asp?News_ID=141302&sec=1
এদিকে The Peace Campaign Group নামের পার্বত্য বিছিন্নতাবাদীদের একটি গ্রুপ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ গুলোর কাছে স্বারকলিপি দিয়ে দাবী করেছে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিলে পার্বত্য অঞ্চলে ইসলামীকরন চালাচ্ছে ও বাংলাদেশ একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দেখুন The Peace Campaign Group গ্রুপের ওয়েব সাইটে(Chittagong Hill Tracts: The Peace Campaign Group � Meeting on Bangladesh)
To Bangladesh Development Partners Participating in A Special Meeting on Bangladesh, 23-24 February 2005, Washington
21 February 2005, Our paper, "BANGLADESH DEVELOPMENT FORUM 2004 AND CHALLENGES FOR DEVELOPMENT IN THE CHITTAGONG HILL TRACTS", that we had emailed to some of the representatives of Bangladesh development partners prior to the start of the last year's Forum in Dhaka, foretold: "Islamic fundamentalism is on increase in the CHT to an alarming extent". Within a short span of time this prediction has manifested itself as a real threat not only to the Jumma indigenous people in the CHT, but also to all democratic institutions in Bangladesh. Today, it is the main challenge to any Bangladesh development planning.
The government has been engaged in doing all appropriate for its hidden program of islamization in the CHT. The government, who defines Bangladesh as an "Islamic democracy" to qualify for international aid, has miserably failed to meet its commitments made at the previous Bangladesh Development Forums for good governance, law and order, establishment of a national human rights commission, separation of the judiciary from the legislative and administrative organs of the government and setting up an ombudsmen or anti-corruption mechanism, among others. Prajnalankar Bhikkhu General Secretary)


২. পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে উপরের কয়েকটি টুকরো খবর বিশ্লেষনের দাবি রাখে। খরবগুলো আসলেই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি একটি আরেকটির সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত। এগুলো বিশ্লেষন করা যায় এভাবে.
ক. আরেকটি পুর্ব তিমূর কেন দরকার?
পাশ্চাত্যের বিভিন্ন থিংক ট্যাংক বা গবেষনা প্রতিষ্টান গুলোর ভাষ্যমতে এই শতাব্দীতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু ইউরোপ-আমেরিকা থেকে স্থানান্তর হয়ে চলে আসছে ও আসবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে চায়না, আসিয়ান ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে (দেখুনঃ Mapping the Global Future, CIA Report, 2020, http://www.dni.gov/nic/NIC_globaltrend2020.html )। সম্প্রতি জার্মানীতে প্রকাশিত এক রি্পোর্টে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মদক্ষ জনশক্তি দিন দিন মারাত্নকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা মুলত অনেকটাই পুরুন করবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পুর্ব থেকে আসা একঝাক মেধাবী তরুণ। জার্মান সমাজবিঙানীরা তাই দক্ষিণ-এশিয়ার নাম দিয়েছে Future Land South Asia (জার্মান ভাষায় বলা হয়, Zukunft Land Sued Asien)। চীন, আসিয়ান অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়াকে যেখান থেকে নিয়ন্ত্রন করা যায়, এমন একটি �বাফার রাষ্ট্র� আমেরিকা ও তার সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব সময়েই খুছতেছিল। এ ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রটি খৃষ্টান রাষ্ট্র হলেতো সোনায় সোহাগা। ফিলিপিনস, পুর্ব তিমুর ছাড়া এশিয়ায় আর কোন খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র নেই। ফিলিপিনসে বহু বছর মার্কিন বাহিনী ঘাটি গেড়ে থাকতে পেরেছিল ও চেয়েছিল তার অন্যতম কারন ছিল দেশটি খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট। ওদিকে খবরে প্রকাশ, মায়ানমার চীনের সহযোগীতায় পরমানু অস্ত্র নির্মানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। খবরটি সত্য হলে মার্কিনীদের কাছে বাংলাদেশে তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার, পশ্চিমা শক্তি চীনকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য কিছু দিনের জন্য ভারতের সাথে সখ্য গড়েছে, কিন্ত এই সখ্য বেশি দিন স্থায়ী হবে বলে মনে হয় না। এই সখ্য তত দিন পর্যন্ত থাকবে যতদিন পশ্চিমা শক্তি এই অঞ্চলে তাদের নিজ ধর্মের একটি (খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট) বাফার রাষ্ট্র না পাচ্ছে। ভারতের সেভেন সিসর্টাস এর মনিপুরসহ অনেক রাজ্যই অদুর ভবিষ্যতে খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমা শক্তি এসব রাজ্যের পুর্ব তিমুরের মতো হস্তক্ষেপ করতে চাইলে ভারত সেটা মেনে নেবে না। তাছাড়া ভারতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির উথ্যান পশ্চিমা বিশ্বের মাথা ব্যাথার কারনও বটে। সম্প্রতি বিজেপির ভাবী প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাকে কল্পনা করা হচ্ছে সেই নরেন্দ মোদীকে আমেরিকা দশ বছরের মধ্যে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে খৃষ্টানদের নির্যাতন, এমনকি পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটছে অহরহ।
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত বাংলাদেশে পুর্ব তিমুরীয় বা দক্ষিণ সুদান মডেল বাস্তবায়ন যত সহজ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোন দেশে তা সম্ভব নয়। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের (geo-political and geo-strategic location) মত আর দ্বিতীয় কোন লোকেশান এই মুহূর্তে পশ্চিমাদের হাতে নেই। ভারতের সেভেন সিসটার্সের সব রাজ্যই ল্যান্ড লকড (যে সব দেশের মূল ভূ-ভাগের সাথে সরাসরি কোন সমুদ্র সংযোগ থাকে না তাদেরকে ল্যান্ড লকড রাষ্ট্র বলা হয়, যেমন, নেপাল, ভুটান, মঙ্গোলিয়া)। সব মিলিয়ে বলা যায়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

খ. আরেকটি পুর্ব তিমূর বা ইসরাইল কি সম্ভব?
১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে ক্যাথোলিক খ্রীষ্টানের হার ছিল ৩০-৪০% যা ১৯৯০ এর দিকে বেড়ে দাড়ায় ৯০%। ঠিক তেমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন খ্রিষ্টান মিশনারি এনজিও পশ্চিমা শক্তি বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহতায় তৎপরতা চালাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। খ্রিষ্টানাইজেশান প্রক্রিয়ার মাধ্যেমে মাত্র ২০ বছরের মাথায় পূর্ব তিমুরকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আলাদা করে দিয়ে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে একটি পৃথক রাষ্ট্র করে দেয়া হল। অথচ কাশ্মীরের মানুষ মুসলমান হওয়ায় তারা ৬০ বছর ধরে সংগ্রাম করলেও জাতিসঙ্ঘ তাদের রাষ্ট্র গঠনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।


ছবিঃ ভুমধ্যসাগরের তীর ঘেষে ইসরাইল (উপরে)। ঠিক সাগরের কাছাকাছি পার্বত্য চট্রগ্রামও। আয়তনেও কাছাকাছি।

২০০০ শুরূতে নতুন শতাব্দীর জন্য এক বাণীতে ততকালীন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগূরু পরলোকগত পোপ জন পল একটা গুরূত্বপুর্ন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, �গত শতাব্দীতে আমরা আফ্রিকাতে নজর দিয়েছিলাম। আফ্রিকাতে আমাদের মিশন অনেকটাই শেষ। এই শতাব্দীতে আমাদের নজর থাকবে এশিয়ার দিকে�। পোপ জন পল ঠিকই বলেছেন। আফ্রিকার এককালের অধিকাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র এখন খ্রষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট দেশে পরিনত হয়েছে। আফ্রিকাতে আগের মত যুদ্ধ বিগ্রহ নেই বললেই চলে। এই শতাব্দীর শুরু থেকে ইরাক দখল করে এককালের সম্পদশালী একটি দেশকে মিসকিনে পরিনত করা হল। আফগানিস্তান দখল করা হলো। মজার ব্যাপার হলে, এই দুটি মুসলিম দেশ দখল ও ধবংস করে বলতে গেলে জোর করে ব্যাপক ভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে খ্রিষ্টান মিশনারি এনজিও গুলোকে। আফগানিস্তানে তো খোদ মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীকে জনগনের মাঝে বাইবেল বিতরন ও জোর করে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করানোর অভিযোগ উঠছে ব্যাপক ভাবে।
কাকতালীয় ভাবে দেখা যায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম (আয়তন ১৪,০০০ বর্গ কিলোমিটার), পূর্বতিমুর ( আয়তন ১৪,৫০০ বর্গ কিলোমিটার) ও ইসরাইলের (দখলকৃত আরব ভূমিসহ বর্তমান আয়তন ২০,৫০০ বর্গ কিলোমিটার) আয়তন প্রায় কাছাকাছি। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের রয়েছে চমতকার ভূরাজনৈতিক অবস্থান যা ইসরাইল ও পূর্বতিমুরের সাথেই সহজেই তুলনা করা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় পুর্ব তিমুর বানিয়ে সহজেই ইসরাইল স্ট্যাইলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কিছু অংশ দখল করে নিতে পারলেই খুব সহজে বঙ্গপোসাগরের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে এই সম্ভাব্য খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্রটির। অনেকের ধারনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টেকনাফে ২০-৫০ মেয়াদী পরিক্ল্পনা নিয়ে একটি গভীর সমুদ্র বন্দের জন্য বাংলাদেশকে বার বার চাপ দিচ্ছে মুলত ভাবী এই খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্রটির কথা মাথায় রেখেই।
গ্লোবাল পলিটিশিয়ান (global politician) নামক ম্যাগাজিনে বলা হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা একইসাথে বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রীষ্ট ধর্ম, হিন্দু ধর্ম ও তাদের নিজস্ব ধর্ম পালন করে থাকে। এখানে উপজাতিদের কত ভাগ খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছেই নেই। বিশ্লেষকদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ইতিমধ্যেই খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট এলাকায় পরিনত হয়েছে। কৌশলগত কারনে (আরও কিছু সময় দরকার পরিপুর্ন খ্রিষ্টানাইজেশান প্রক্রিয়া শেষ করতে)পশ্চিমা শক্তির পরার্মশে তা কম করে দেখানো হচ্ছে।

গ. উপজাতি যখন আদিবাসী
আমরা এতদিন থেকে অবাংগালী অধিবাসীদের উপজাতি (Tribal) হিসেবেই জানতাম। ইতিহাসবিদ ও নৃবিঙানীরাও (anthropologists) বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা এদেশের উপজাতি । বাংগালীরা হাজার বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অবাংগালীরা মাত্র তিন-চার শত বছর আগে সেখানে বসবাস শুরু করেন। বাংলাদেশ সংবিধানও বলে এরা উপজাতি। বিশ্ববি্দ্যালয় পড়ার সময় শুনেছি পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু সহপাঠী উপজাতী কোটায় ভর্তি হয়েছে। কোন দিন ওদের আদিবাসী বলা হত বলে জানতাম না। ১৫-২০ আগেও এদের উপজাতি বলা হতো। এখন দাবী করা হচ্ছে এরা নাকি আদিবাসী (Aborginals)। আর এই কোরাসের সাথে যোগ দিয়েছে মস্তিক বিক্রি কারি কিছু মিডিয়া। যাই হোক উপজাতি- আদিবাসী নিয়ে বির্তক করা আমাদের এই লেখার মুল থিম নয়।

মুলত গত এক দশক ধরে ঢাক ডোল পিটিয়ে এদের বলা হচ্ছে আদিবাসী। প্রতিদিনেই যাক-জমকের সাথে পালন করা নানান কিছিমের অনুষ্টান। তোলা হচ্ছে নানান সব দাবী দাওয়া। তাদের দিতে হবে আলাদা সংবিধান, আলাদা ভাষা। তার পর আলাদ রাষ্ট্র। এসব দাবীর উপর দেওয়া হচ্ছে ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ। ভাবখানা দেখে মনে হয় এত দিন উপজাতিরা বাংলাদেশে সুখে শান্তিতে বসবাস করতো। হটাত করে কিছু দিন আগে বাংগালীরা বাংলাদেশে এসে তাদের (কথিত আদিবাসীদের )বিতাড়ন করেছে, তাই আমেরিকা-ইউরোপ আসুক, দেখুক আর তাদের জন্য একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের ব্যাবস্থা করে দিক। বিদেশের টাকায় পরিচালিত কিছু এনজিও, মস্তিক বিক্রি কারি কিছু মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের অবিরত প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারী সব নথি পত্রে উপজাতি শব্দের পরিবর্তে আদিবাসী সংযোজন করা হবে।
মনে করা হয়, সন্তু লারমারা মুলত স্বশত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের থিংক ট্যাংক বা গবেষনা প্রতিষ্টান গুলোর পরার্মশে। তারা বুঝে যায় স্বশত্র সংগ্রাম করে পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে চাল দিতে হবে ধীরে ধীরে খ্রিষ্টানাইজেশান প্রক্রিয়া ও আদিবাসী কার্ড। এই দুটি বিষয়কে হাইলাইটস করলেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে এসে বাংলাদেশকে বাধ্য করবেন পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনতা দিতে। ঠিক যেমন করা হলো পূর্ব তিমুরে।
উপজাতীয়দের নামে মূলত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে চাকমারা। তারা ৮৬ শতাংশ শিক্ষিত। বাঙালিরা মাত্র ৩ শতাংশ শিক্ষিত এবং অন্যান্য যেসব উপজাতি রয়েছে তারা কোনো হিসাবের মধ্যে পড়ে না। রাষ্ট্রের যেকোনো জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে রাষ্ট্র। কিন্তু শান্তিচুক্তির নামে রাষ্ট্র নিজের পাহাড়ে এ অধিকার হারিয়েছে। এমনকি খনিজসম্পদ উত্তোলনের বিষয়ে বিদেশীদের সাথে চুক্তি করারও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সন্তুদের।
উল্লেখ্য পার্বত্য চট্রগামের উপজাতিরা কখনোই আদিবাসী (Indigeneous) ছিলো না। ইতিপুর্বের কোন নথিপত্রে এদের আদিবাসী হিসেবে দেখনো হয়নি, বলা হয়েছে এরা মুলত উপজাতি (Tribal/Sub-caste)।
  • এনিয়ে দেখুন, বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য-বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট সেখানে উপজাতিদের (Tribals) আদিবাসি (Indigeneous) বলা হয়নি, এমনকি ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তিতেও উপজাতিদের আদিবাসি বলা হয়নি http://www.mochta.gov.bd/client_peace_accord.php?id=2
  • রা উপজাতি, আদিবাসী নয়, এনিয়ে বিশিষ্ট গবেষক চট্রগ্রাম বিশ্বদ্যালয়ের অধ্যাপক ড হাসান মোহাম্মদের কলামটি পড়ুনhttp://www.dailynayadiganta.com/2009/04/25/fullnews.asp?News_ID=141302&sec=1
  • প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞান গবেষক, ড এবনে গোলাম সামাদ, পার্বত্য তিন জেলা নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখোঃ দেশবাসী সচেতন হও, শীর্ষক কলামে
এখানে এমন অনেক উপজাতির বাস, যারা ইংরেজ আমলের আগে ছিল না। ইংরেজ আমলে প্রধানত আরাকান থেকে এখানে উপনিবিষ্ট হয়েছে। এদিক থেকে বিচার করলে এখানে তাদের বলতে হয় পরদেশি। ওই অঞ্চলের ভুমিজ সন্তান তারা নয়। অনেকে না জেনে তাদের মনে করেন আদিবাসী। চাকমা, মারমা প্রভৃতিকে আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা খুবই বিভ্রান্তিকর।
(দেখুন, আমার দেশ, ২০০৯-০৫-০৬)
  • সেকুলার (আওয়ামী)পন্থি বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘Most of the tribal people move into this land from areas now in Myanmar (former Burma) during the period from the 15th to the mid-nineteenth centuries. The tribes belonging to the Koki group were the earliest to settle, and the Chakmas came much later (War and Peace in the Chittagong Hill Tracts, P.5, published by Agamee Prakashni Dhaka, 1999).
Full part porun ekhan theke
http://www.sonarbangladesh.com/blog/HossainKhilji/35288

No comments:

Post a Comment