Sunday 30 March 2014

মিল-অমিলঃ তারেক-জয়- শামস মোহাম্মদ

বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সম্প্র্রতি জাতির সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান এবং পরমাণু বিজ্ঞানী ডঃ ওয়াজেদ মিয়া ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে রাজনীতি থেকে একসাথে মাইনাস করার চক্রান্ত চলছে। আর এ বিতর্ক ডালপালা বিস্তার করেছে দেশ হতে দেশান্তরে। সম্প্রতি মার্কিন মুল্লুকে এসে সরকারের আরেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ঘোষণা করেছেন, ‌‌'বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র চাঁদের মত পবিত্র’। আজকের নিবন্ধ এ আলোচনার মধ্যে রাখার চেষ্টা করব।
চাঁদ পবিত্র কি না তা কোনো ধর্মগ্রন্থে পাওয়া না গেলেও কবি-সাহিত্যিকরা চাঁদেও কলঙ্ক আবিস্কার করেছেন। তাই বলে কি চাঁদ সুন্দর নয়? হ্যাঁ, সুন্দর বটে- পুর্নিমায় আলো ছড়ায়। তবে তা কেবলই পক্ষকালের জন্য, কৃষ্ণপক্ষে এসে গভীর অন্ধকারে ঢেকে দেয় সারা পৃথিবীকে। তাছাড়া চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। আমরা অবশ্য পুর্নিমার চাঁদ চাই- আলোকিত মানুষ চাই।

তারেক আর জয়। বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক পরিবারের এ উত্তরাধিকারদের মধ্যে মিল-অমিল খুঁজে বেড়ান অনেকেই। আসলেই কি এরা একে অপরের তুল্য নাকি প্রতিপক্ষ। স্বল্প পরিসরে ও কষ্টে এটা নির্ণয় করার চেষ্টায় কতটুকু কেষ্ট মিলবে সেটা বিচারের ভার পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দিলাম।
প্রথমেই আসা যাক দুজনের পারিবারিক একটি মিল নিয়ে।আর তা হলো- দুজনেরই মা একাধিকবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, হয়েছেন জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা, আর দেশের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং একমাত্র কান্ডারী। এরপরে আসা যাক, তারেক ও জয়ের রাজনীতি নিয়ে। মন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, রাজনীতি থেকে মাইনাস ষড়যন্ত্রের কথা। তারেক রহমান রাজনীতিতে এসেছেন ১৯৯২ সালে গাবতলী বিএনপি-র প্রাথমিক সদস্য থেকে, এর পরে বগুড়া জেলা বিএনপির সদস্য; ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের সাধারন নির্বাচনে তার মা বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সারাদেশে নির্বাচনী সফর করে রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন; ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বহুল আলোচিত হাওয়া ভবনে চেয়ারপারসনের জন্য তথ্য ও গবেষনা সেল স্থাপন করে তথ্য-উপাত্ত-কৌশল দিয়ে দলকে সহায়তা করেন, যার বদৌলতে সে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্টতা লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি। এরপরে গ্রামে-গঞ্জে সফর করে রাজনৈতিক সংশ্লেষ, উপজেলা সম্মেলন, বিভাগীয় সম্মেলন, ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন, তৃণমূল সম্মেলন, ছাত্রদল পূনর্গঠন ও মূলদলের কর্মকান্ড জোরদার ও ডাটাবেজ তৈরী সহ ব্যাপক অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিএনপির স্থায়ী কমিটি তারেক রহমানকে জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব পদে নিয়োগ করে ২০০২ সালে। সর্বশেষে গত ৮ ডিসেম্বর ২০০৯ জাতীয় কাউন্সিলে দলীয় কাউন্সিলরদের ভোটে তারেক নির্বাচিত হন দলের ২য় কান্ডারী- সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে।
অন্যদিকে জয়ের রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দলীয়ভাবে তেমন কিছু জানা যায় না। সেক্ষেত্রে বলা যায়, কাউকে  মাইনাস করতে হলে আগে তো তাকে প্লাস হতে হবে। তবে ওয়েবসাইটের কল্যানে জয়ের কিছু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও দৃশ্যমান। World Economic Forum-এর Young Global Leaders Nominees-2007 ব্রোশিওরে Wazed Sajib Joy (Name), Awami League (company), Member (position), Bangladesh (country), Political (stake holder) থেকে এটি পরিস্কার দৃশ্যমান, সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেকে আওয়ামীলীগের সদস্য হিসাবেই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেছেন। এমনকি এ ফোরামে তিনি আওয়ামীলীগকে রাজনৈতিক স্টেকহোল্ডার কোম্পানী হিসাবে তুলে  ধরেছেন, এর জন্য দলীয় অনুমতি লাভ করুন বা নাই করুন। তাছাড়া বছর কয়েক আগে স্বস্ত্রীক ঢাকায় এলে জিয়া বিমানবন্দর থেকে শোভাযাত্রাসহ স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানাদিতে তার সরব উপস্থিতিকে যে কেউ তারেকের পদাংক অনুসরনের চেষ্টা বলে চালিয়ে দিতে পারে। এর বাইরে ১৯৯৬-২০০১ সালের ক্ষমতাকালে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশ দূতাবাসের বেতন-যানবাহন নিয়ে উপদেষ্টার কাজও করেছেন কিছুকাল। অনেকের কাছে জয়ের সে সময়কার বিজনেস কার্ড পাওয়া যাবে বলেই বিশ্বাস। অবশ্য চলতি রাজত্বে সজীব ওয়াজেদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, যা পরে সংশোধন করে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসাবে এখনও কর্মরত। এসব থেকে ধরে নেয়া যায় সজীব ওয়াজেদের রাজনীতি করার খায়েশ থাকলেও থাকতে পারে। তবে তারেকের মত এখনো তার সময়-সুযোগ হয়নি, কেননা তার বিদ্যাচর্চার পর্ব এখনও শেষ হয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এদের রাজনীতি শিক্ষাকে তুলনা করা চলে, জওয়াহেরলাল নেহেরু যেমন ইন্দিরাকে হাতে-কলমে রাজনীতি শিখিয়েছেন তেমনি খালেদা জিয়া শিখিয়েছেন তদীয় পুত্র তারেককে। আর ইন্দিরা গান্ধী তার ছেলে রাজীব গান্ধীকে ক্যামব্রিজের ডিগ্রি নিয়ে প্রস্তুত করেছিলেন, সজীবকেও তার মা সেভাবে প্রস্তুত করছেন।
২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে ঢাকায় প্রথম সফরে সজীব ওয়াজেদ ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের সাথে বৈঠক করে দেশের উন্নয়নে তার আগ্রহ ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। একই কাজ তারেক রহমান করেছেন অনেকবার। তাছাড়া গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বাংলাদেশের ভিশন ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে সজীব ওয়াজেদ সরকারী উপস্থাপনা করেছেন। এছাড়া কার্ল সিভাক্কোর সাথে `Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh’ শীর্ষক গবেষনা করে দেখতে পেয়েছেন বাংলাদেশে আগের চেয়ে ৩০% বেশী মাদ্রাসার ছাত্র সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়েছে, যাতে তার উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। তারেক রহমানও তার মায়ের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট, মাইক্রোসফটের কার্যালয়ে দেখে এসেছেন। এরপরে বিল গেটসও বাংলাদেশে গেছেন, সেখানে তাদের সাথে দেখা এবং কথাও হয়েছে।
২৩ মে ২০০৯ সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার পুত্র ববি কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কিছু সাংবাদিকের সাথে বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘন্টার বৈঠকে সরকারের কর্মকাণ্ডে সংবাদপত্র ও রেডিও-টেলিভিশনগুলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। কিভাবে প্রচার মাধ্যমে সরকারের বেশি বেশি খবর প্রকাশ করা যায় এবং কিভাবে সরকারবিরোধী খবর প্রচার বন্ধ করা যায় সেসব বিষয়ও আলোচনায় স্থান পায়। এ সময় তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস সেকশনের একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। একই রকমভাবে তারেক রহমানও বিভিন্ন জুনিয়র মন্ত্রীদের সাথে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়েছেন।
এবার আসা যাক ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে। ১৯৭৫ সালে জয়ের নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নিহত হবার পরে সজীব ওয়াজেদ মায়ের সাথে জার্মানী-লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ হতে গ্রাজুয়েশন করে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্সে গ্রাজুয়েশন করেন, এবং পরে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে মাষ্টার্স করেন। তবে নিজেকে আইটি প্রফেশনাল পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন জয়। তার পুরো জীবন ও শিক্ষা লাভ ঘটেছে বাংলাদেশের বাইরে। ভারতে অধ্যয়নকালে এক শিখ নারীর সাথে প্রণয় ঘটিত রটনা রয়েছে বেশ। তবে পরে Richard D Loomis এর সাবেক স্ত্রী মার্কিন এটর্নী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ার নামে জনৈক ভিনধর্মের নারীর পাণি গ্রহণ করেছেন ২০০২ সালে।
অন্যদিকে তারেক রহমান বাংলাদেশেই আজীবন কাটিয়েছেন। রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে আদমজী ক্যান্টনমেন্টে কলেজ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। ১৯৯৪ সালে সাবেক নৌবাহিনী প্রধান, ডিসিএমএলএ ও সাবেক মন্ত্রী রিয়ার এডমিরাল এম এ খানের কন্যা ডাঃ যুবাইদা খানকে বিবাহ করেন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ২টি মামলায় চার্জ গঠন হয়েছিল সে আমলে। এনবিআরের করা ট্যাক্স ফাঁকির মামলার বিচার শুরুর আগেই স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া দিনকাল প্রকাশনা লিমিটেডের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল সংক্রান্ত মামলা খারিজ (কোয়াশ) করেছেন আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা কোয়াশ করার আবেদনে গত আক্টেবরে সরকারকে কারন দর্শাতে নির্দেশ দেয়। চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ৮ টি মামলার সবগুলোতেই উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন, সেই সাথে মামলাগুলো স্থগিতও করেছেন উচ্চ আদালত। এসব চাঁদাবাজির মামলাগুলোর মধ্যে তিনটিতে তাকে সরাসরি আসামি করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলো গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে তাকে আসামি করা হয়েছে। তারেকের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ২০০৭ সালের ৮ মার্চ গুলশান থানায়। ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা আমিন আহমেদ ভূইয়া ১ কোটি টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগে এ মামলা করেন। মামলা করার আগের রাতেই তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার গুলশান থানায় চাঁদাবাজির দ্বিতীয় মামলা দায়ের করেন মার্শাল ডিস্টিলারিজের মালিক হারুন ফেরদৌস। এ মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। তৃতীয় মামলাটি হয় কেরানীগঞ্জ থানায় গরু ব্যবসায়ী জনৈক আদম আলীর আবেদনে। এ মামলায় কোকো-৩ লঞ্চ দিয়ে ১৩টি গরু ডুবিয়ে মারার অভিযোগ আনা হয়। গুলশান থানায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে ব্যবসায়ী আবু শাহেদ সালেহের করা মামলা, ধানমন্ডি থানায় ৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ঠিকাদার মীর জহির হোসেনের করা মামলা এবং ব্যবসায়ী খান মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিনের কাছ থেকে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে গুলশান থানায় করা মামলা। এ মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে তারেক রহমানের সহযোগী আসামি করা হয়েছে। বাকী মামলাগুলো হলো-  বসুন্ধরা গ্রুপের সাব্বির হত্যা মামলা ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ, যা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সাথে তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করা হয়। এ ছাড়াও মামুনের সঙ্গে তারেক রহমানকে যৌথভাবে আসামি করা হয়েছে যেসব মামলায় সেগুলো হলো- চীনের হারবিন পাওয়ার কোম্পানির বাংলাদেশের প্রতিনিধি খাদিজা ইসলাম ৫ কোটি টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগে মামলা। জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধানের কাছ থেকে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে মামুন। ২০০৭ সালের বছরের ৫ জুন ঢাকার শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়। সবগুলো মামলাই এখন উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
এপর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সজীব ওয়াজেদ জয়ও যুক্তরাষ্ট্রে নানাবিধ আইন লঙ্ঘন ও অনৈতিক কাজে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হন। এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্যঃ
  • ২০০৮: ভার্জিনিয়া কোর্টে OPER UNINSPECTED VEHICLE অপরাধে সজিব ওয়াজেদের বিচার হয়। কোর্ট রেকর্ডঃ State of Virginia Criminal Detail Defendant Name WAZED, SAJEEB AHMED Date of Birth Jul 27 1971 Sex M Race A Court Falls Church GD & JDR Case Number 610GT0800799400 Document Number Disposition Code NP Offense Date Oct 3 2008 Arrest Date Filing Date Oct 6 2008 Disposition Date Nov 19 2008 I Charge OPER UNINSPECTED VEHICLE Code Section A.46.2-1157
  • ২০ মে ২০০৪ আরলিংটন কাউন্টিতে আইন ভঙ্গের অপরাধে সজীব ওয়াজেদকে শাস্তি দেয়া হয়।
  • ২০০১ সালের ২৯ এপ্রিল ভার্জিনিয়ার রাপহ্যানোক কাউন্টিতে জয় আটক হন এবং দন্ডিত হন।
  • ১৯ মার্চ ২০০০ ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে আবার গ্রেফতার হন তিনি। এবারো অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ৩০ দিনের জেল, ১২ মাস প্রবেশন, ৪০০ ডলর জরিমানা করা হয়। কোর্ট রেকর্ডঃ  State of Virginia Criminal Detail Defendant Name WAZED,SAJEEB AHMED Date of Birth Jul 27 1971 Sex M Race W Court Hanover Circuit Case Number 085CR0000017400 Document Number Disposition Code G Offense Date Feb 6 2000 Feb 6 2000 Filing Date Mar 10 2000 Disposition Date May 8 2000 Def. Status RECKLESS DRIVING 100/65 Code Section A.46.2-862
  • ৬ ফেব্রুয়ারী ২০০০ জয় ভার্জিনিয়ার হ্যানোভার কাউন্টিতে আটক হন এবং রাডার ডিটেক্টরসহ বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত হন। কোর্ট রেকর্ডঃ Defendant Name WAZED, SAJEEB AHMED Date of Birth Jul 27 1971 Sex M Race W Court Hanover Circuit Case Number 085CR0000017400 Document Number Disposition Code G Offense Date Feb 6 2000 Arrest Date.
  • ১৪ জুন ১৯৯৮ জয় টোসের টরেন্টো কাউন্টিতে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে ১২০ দিন কারাবাস, দুই বছরের প্রোবেশন ও ৫০০ ডলার জরিমানা করে। কোর্ট রেকর্ডঃ ID No. 6091439 Date of Birth Jul 27 1971 Type Code, Individual ID No. 5703475 DPS ID No. 06101867, TRN ID No. 12452324 Date of Arrest Jun 14 1998 Sequence Code A Tracking Incident Number 0209195886 Arresting Agency ARLINGTON PD Offense Code 54040009 Offense Description DRIVING WHILE INTOXICATED Level and Degree of Offense MISDEMEANOR - CLASS B Statute Citation of Disposed COUNTY CRIMINAL COURT 6 FORT WORTH Court Offense 54040009 Court Disposition CONVICTED.
দুজনের লেখাপড়ার বিষয় নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। জয়ের ভাষায় `I have a Bachelor of Science with a triple major in Physics, Mathematics and Computer Science from St. Joseph's College, an affiliate of Bangalore University. I am also a graduate of the University of Texas in Arlington, Texas with a Bachelor of Science in Computer Engineering. I am currently back in school, working towards a Masters in Public Administration at the John F. Kennedy School of Government at Harvard University.’  জয়ের এই পড়ালেখার পেছনে তার অর্থায়নের বিষয়টিও আলোচনার দাবী করে। পকেটের পয়সায় যারা বিদেশে পড়াশুনা করেন তাদের প্রতি বছর টিউশন ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, পরীক্ষার ফি যোগাতে অমানবিক প্ররিশ্রম করতে হয় ভ্যাকেশনে ও টার্ম টাইমে। সেখানে একজন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র টেক্সাস, হার্ভার্ড, ব্যাঙ্গালোর থেকে ডিগ্রী নিচ্ছেন এটা যেমন গর্বের কথা তেমনি ভাবনার বিষয়- এত খরচের টাকা আসে কোত্থেকে? টেক্সাস ও হার্ভার্ডের একটা খরচের হিসাব বের করা যাক। টেক্সাস ইউনিভার্সিটির মোটামুটি খরচ প্রতি বছর ১৩৫২০-২৪৬০৯ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৯-১৭ লাখ টাকার সমান। অন্যদিকে হার্ভাডের এমসি/এমপিএ প্রোগামে এক বছরের খরচ ৭৬৪১১ মার্কিন ডলার [Tuition $37576 + Summer Session $6611+ Activity Fee $150+ Emergency on campus health services Fee $1,126+ Health/Hospital Insurance (BC/BS) $1714+ Room and Board $21530+ Personal/Travel $5,266+ Books and Supplies $2,438= Total (Direct and Indirect Costs) $76,411. যা প্রায় ৫২ লক্ষ টাকার সমান। অর্থাৎ গ্রাজুয়েজন ও মাষ্টার্স মিলিয়ে খরচ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি টাকার মত হবে।
২০০১-২০০৬ সময়ে শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, মন্ত্রীর সমপরিমান বেতন পেতেন। বাংলাদেশে একজন মন্ত্রীর বেতন ৩২,০০০ টাকা মিনিষ্টার্স প্রিভিলেজ এ্যাক্ট ২০০৫ অনুযায়ী। ডঃ ওয়াজেদ মিয়াও একজন নামকরা পরমাণু বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তিনিও উপার্জনক্ষম ছিলেন। দুজনের উপার্জন থেকে পারিবারিক খরচ বাদ দিয়ে কত সাশ্রয় করা সম্ভব? ওয়াজেদ সাহেব মৃত্যুকালে ৩০ লাখ টাকা রেখে গেছেন, যা একজন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সদুপায়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ন। জয়ের হার্ভার্ডের গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়কার মন্তব্য শুনে এটা পরিস্কার বোঝা যায়, ঐসময়ে তার কোন কাজ ছিলো না। বাংলা পত্রিকার সাথে আলাপকালে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‍‍‌''আমার মায়ের স্বপ্ন ছিল হার্ভার্ড থেকে আমি গ্রাজুয়েশন করি। তাঁর এই স্বপ্ন পূরনে সফল হতে পেরে ধন্য মনে করছি। এছাড়াও আরো অনেক কিছুই করার আছে। তার সবটাই চেষ্টা করবো পূরন করতে। তিনি বলেন, আমি এখন চাকুরী খুঁজছি। যে কোন প্রাইভেট কোম্পানীতে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করতে চাই। এজন্য আবেদন পাঠাচ্ছি বিভিন্ন জায়গায়। এজন্য তিনি দেশবাসীর দোয়া প্রার্থী বলে জানান।''  আরেকটি ব্যাপার এখানে গূরুত্বপূর্ণ যে, এটর্নী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ারকে জয় বিয়ে করেছেন ২০০২ এর ২৬শে অক্টোবর। সেক্ষেত্রে যদি যুক্তির খাতিরে ধরে নেয়া যায় তার স্ত্রী তাকে অর্থ সাহায্য করেছেন তাতেও বৃহদ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে উল্লিখিত অর্থের অর্থের সংস্থান পরিস্কার হয় না। ২০০৮ সালের নির্বাচনকালে জয়ের মাতা শেখ হাসিনা তার সম্পত্তির যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে ৩,৬৫,০২,৯০৪ টাকার সম্পদের বিপরীতে ২০০৭-০৮ বছরে পারিবারিক খরচ ছিল ২ লাখ টাকা। এতে করে শেখ হাসিনার স্থায়ী সম্পত্তি ও অপারপর হিসেব বিবেচনা করেও জয়ের এ সব শিক্ষাখরচের অর্থের উৎস খুঁজে পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পরে পরিবারের আর্থিক সঙ্গতির কথা বিবেচনা করে ৩১শে মার্চ ১৯৮২ এক সরকারী প্রজ্ঞাপনমূলে তারেক ও আরাফাত দুইভাইয়ের পড়াশুনার ব্যয়ভারের জন্য বাংলাদেশ সরকার এককালীন ১০ লাখ টাকা মঞ্জুর করে।
এবার কার কত সম্পদ এবং এর উৎস কি তা নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক। সজীব ওয়াজেদ জয় ইকোনোমিক ফোরামের ইয়ং গ্লোবাল লিডার ২০০৭ প্রোফাইলে তার সম্পদ ডিকেয়ার করেন তা এ রকম, ‘Wazed, Sajeeb YGL 2007 Member, Awami League, Bangladesh, Bangladesh:  Sajib Wazed Joy is a member of the Awami League, the oldest and largest political party in Bangladesh. He currently manages the communication and lobbying efforts of the Awami League in Washington, D.C., working directly with the US Administration. Previously, he served under the former Prime Minister of Bangladesh, Sheikh Hasina. After moving to the US, he founded Mvion Inc., a startup company through which he developed prototype software and raised US$ 8 million in venture capital. Mvion eventually brought in revenues of approximately US$ 2,00,000 per month and was evaluated at US$ 80-90 million. Sajib also founded the Bongobondhu Foundation of US, which provides basic healthcare and immigration assistance to needy expatriate Bangladeshis in the US. He also raises funds for its sister organization, the Bongobondhu Trust in Bangladesh, and promotes democracy and human rights issues there in partnership with the US Administration.’ অর্থাৎ, জয়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমান বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৪৪-৬১২ কোটি টাকা এবং প্রতি মাসে তার আয় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল যোগাড় করে থাকেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা গিয়াস আহমেদও গত সপ্তাহে অভিযোগ করেছিলেন, ২০০৭ সনে সজিব ওয়াজেদ জয় কিভাবে গ্লোবাল এওয়ার্ড পেল তা তদন্ত করলে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি প্রকাশ পাবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জয় ৫শত কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন মর্মে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। লসএঞ্জেলেস টেক্সাসে জয় একাধিক কোম্পানি গঠন করেছিলেন যা বর্তমানে ক্লোজ করে রাখা হয়েছে। জনাব গিয়াস আহমেদ বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ওয়াল্ড ইকোনোমি ফোরামে জয় বার্ষিক ৯০ মিলিয়ন ডলার ইনকাম দেখিয়ে সত্যায়নপত্র জমা দিয়েছেন।
পত্রিকান্তরে  জয়ের যে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ
  • টেক্সাস ভিত্তিক ইনফোলিংক ইন্টারন্যাশনাল (নভেম্বর ৯৮ থেকে মার্চ ২০০১)
  • নোভা বিডি ইন্টারন্যাশনাল এলএলসি (মে ৯৮ থেকে আগস্ট ২০০১)
  • টাইকো কমিউনিকেশন ইউএসএ-র সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি।
  • ২০০৫ সালের মার্চে তিনি জয় ওয়াজেদ কনসাল্টিং ও সিম গোবাল সার্ভিস নামে আরো দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুই কোম্পানির বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ও লেনদেন তখন ঘোষনা করা হয়েছিল ৬১ হাজার ও ৩৫ হাজার ডলার।
  • ২০০৬ সালের ১২ মে নিজের নামে ৩৮১৭ বেলম্যানর, ফলস চার্চ ভার্জিনিয়ায় ১০ লাখ ডলার দামের একটি বাড়ি কিনেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে জয় ও তার স্ত্রীর যৌথ মালিকানাধীন আর একটি বাড়ি ৭ লাখ ৪৯ হাজার ডলার দিয়ে কিনেছিলেন।
এছাড়া সজীব আহমেদ ওয়াজেদের ঠিকানা সম্পর্কে গুগল সার্চে পাওয়া তথ্যগুলো নিম্নরূপ। এ থেকেও জয়ের বাড়িঘর সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
SAJEEB A WAZED Check for Email Address Google
912 TWIN CREEK DR
Neighborhood & Property Report Record Created: 05/2001
DESOTO, TX 75115 Confirm Current Phone & Address
Background Check on SAJEEB A WAZED SAJEEB A WAZED Born 1971 Check for Email Address Google
4823 MARTIN ST Neighborhood & Property Report Record Created: Unknown
ALEXANDRIA, VA 22312 Confirm Current Phone & Address
Background Check on SAJEEB A WAZED
SAJEEB A WAZED Born 1971 Check for Email Address Google
5907 HIGHDALE CIR Neighborhood & Property Report Record Created: 07/2003
ALEXANDRIA, VA 22310 Confirm Current Phone & Address
অন্যদিকে তারেক রহমান নব্বইয়ের দশক থেকে জাহাজ ও ডান্ডি ডায়িং ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন, পরে দিনকাল পত্রিকাটি পরিচালনা করেন কয়েক বছর। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি মইনুল রোডের বাড়ির এক তৃতীয়াংশের মালিক। এ ছাড়া সব মিলিয়ে তারেক ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব দিয়েছেন দুদকে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৭ লক্ষ টাকার হিসাব বহির্ভুত সম্পদ গোপন করার, এই টাকা তারেক রহমানের স্ত্রী তার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে এফডিআর করেছিলেন বলে ঘোষনা করেছেন। কিন্তু এর যথাযথ ট্যাক্স দেয়া হয়নি অভিযোগ এনে এটাকে অবৈধ সম্পদ গন্য করে মামলা করা হয়।
অন্যদিকে জয় ২০০৯ সালে বসুন্ধরার কর্নধার শাহআলম শতকোটি টাকার বিনিময়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেছেন- এটা পত্রিকান্তরে প্রকাশ। জড়িতদের কেউ কেউ ঘটনার সাথে তেমন জড়িত নন মর্মে দাবী করলেও জয়ের পক্ষ থেকে এ পযন্ত কোন প্রতিবাদ আসে নি।
হাওয়া ভবনের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এবারে কথা বলা যাক। ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিএনপি সরকার উৎখাতের জন্য ট্রামকার্ডের ঘোষনা দেন আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আবদুল জলিল। এর ১০ দিন আগে ২১ শে এপ্রিল আওয়ামীলীগ হাওয়া ভবনের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাওয়া ভবন ঘেরাও কর্মসূচী দেয়। এ ঘটনার ঠিক ৩ দিন আগে আওয়ামীলীগের অভিযোগের সমর্থনে তারেক রহমানসহ বিভিন্ন মন্ত্রীদের নিয়ে একটি দরখাস্ত তদন্তের জন্য ৫টি মন্ত্রণালয়ে পত্র দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সচিব নূরুল ইসলাম। একটি বেনামী দরখাস্তের ওপর ভিত্তি করে এ পত্রটি আবদুল জলিলের ট্রামকার্ডে রসদ হিসাবে সরকারের নিকট প্রতীয়মান হয়, যদিও পরে সরকারী তদন্তে ওই সকল অভিযোগ ভূয়া হিসেবে প্রমানিত হয়। চাঁদাবাজি ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগ করা হয় বন্ধু মামুনের বিরুদ্ধে এবং প্রচারের সময় তারেককে জড়িত করা হয় এতে। কিন্তু তারেক রহমান বিদেশে কোথাও কোনো সম্পদ লুকিয়েছেন- এরূপ প্রমানভিত্তিক কোনো তথ্য সরকারের কোনো কতৃপক্ষ অদ্যাবধি হাজির করতে পারেনি। এর প্রেক্ষিতে হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক দুর্নীতির রটনা সম্পর্কে ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক নিজ নামে লিখেছেন, হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির কেন্দ্র হিসেবে উল্রেখ করা এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত করার একটি চেষ্টা ২০০১ সালের নির্বাচনের কিছুকাল পর থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টদের ২০০১ সালের নির্বাচনে ভূমিকা এবং বিপুল সফলতা হাওয়া ভবনকে টার্গেট হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট অনেকের সামাজিক প্রভাব এবং দ্রুত বর্ধিত বিত্ত-বৈভব ও বাণিজ্যিক সাফল্য হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে মেনে নিতে অনেক সরল মানুষকেও উৎসাহিত করে।
প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সরকারের জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী চৌধুরীকে নিয়ে ঠিক একই রকমের দুর্নীতির অভিযোগ উঠে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে।  পেট্রোবাংলার প্যাডে লিখিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে আবু সিদ্দিকী সাক্ষরিত দরখাস্তে অভিযোগ করা হয় বিনা টেন্ডারে ৩৭০ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেবার বিনিময়ে জয়-তৌফিক ৫ মিলিয়ন ডলার উৎকোচ নিয়েছেন মার্কিন কোম্পানী শেভরনের কাছ থেকে যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৫ কোটি টাকার সমান। ঢাকার দৈনিক আমার দেশ এ সংক্রান্তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২৯ ডিসেম্বর। এর আগে  এ অভিযোগ নিয়ে জ্বালানী মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়, বিষয়টি তদন্তনাধীন ছিল। কিন্তু পত্রিকায় খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সরকারীদল গর্জে ওঠে। দলীয় সভা করে সরকারের মন্ত্রীরা ঘোষনা দিলেন পত্রিকার সম্পাদক-সাংবাদিককে রাস্তায় চলতে দেয়া হবে না। সঙ্গে সঙ্গে সে হুকুম তামিলও হয়ে গেলো। সাংবাদিককে রাস্তায় পেটানো হলো আর সম্পাদককে সারা দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা দেয়া হলো অন্তত ২০ জেলায়। অবশ্য এবারে বিএনপি দুর্নীতির অভিযোগে সুধাসদন বা জয়ের বাড়িঘর ঘেরাও করার দু:সাহস করেনি।
২০০৭-০৮ ফখরদ্দিন-মইনউদ্দিনের দুই বছরের শাসনামলে সজীব ওয়াজেদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলছিল প্রবাসে- গোপনে। সেনাপ্রধান মইন উ আহমদের সাথে সাক্ষাৎ করে, বিভিন্ন মাধ্যমে লবিইং করে, ওয়াশিংটনে ষ্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রকাশ্যে মায়ের নেগোসিয়েশনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে, নিজের বাসায় কেয়ারটেকার সরকারের ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা থেকে শুরু করে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য যা করা দরকার তাই তিনি করেছেন। এর স্বীকৃতিও পাওয়া যায় ইকোনোমিক ফোরামের ইয়ং গ্লোবাল লিডার ২০০৭ প্রোফাইলে। এতে উল্লেখ করা হয়, “Sajib Wazed Joy is a member of the Awami League, the oldest and largest political party in Bangladesh. He currently manages the communication and lobbying efforts of the Awami League in Washington, D.C., working directly with the US Administration.” এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে কিছু শ্লোগান দেশে পাঠিয়ে সফল ভাবেই তা কাজে লাগিয়েছেন। এক কথায়, আওয়ামীলীগের ডিজিটাল রাজনীতির প্রবক্তাও তিনি।
অন্যদিকে এ সময়ে রিমান্ডে-গোয়েন্দা হেফাজতে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে বিনা চিকিৎসায় কারান্তরীণ ছিলেন তারেক রহমান। গ্রেফতারপূর্ব তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে দীর্ঘকাল পেশাগত কাজ করার সুবাদে কাছ থেকে দেখা সাংবাদিক সালেহ বিপ্লব (যিনি এক সময় ছাত্রইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন) হতে ধারনা পাওয়া যেতে পারে। তার ভাষায়, রাজনীতির দলীয় বিতর্কে যাব না। কিন্ত বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছেন তারেক রহমান। কোনো অনুষ্ঠানে দেরি করে যাওয়ার নজির তার নেই। শুধু নিজের সময়ানুবর্তিতাই নয়, নেতাকর্মীদেরও সেভাবে পরিচালনা করেছেন তিনি। বিএনপির ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভা কোনটি কতক্ষণ হবে, কতজন বলবেন-  সব ছিল পূর্বনির্ধারিত। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া, থাকার জায়গা, ঢাকায় ফেরার সময়ঃ সব কিছু ছিল ঘড়ি-ধরা নিয়মে। ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রায় নয় হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছি। এতগুলো দিনে, এতটা পথে কখনোই তাকে দেরি করতে দেখিনি। এটি তাঁর ক্যারিশমার একটি দিক। আরো দিক আছে। তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হলেন, দলীয় চেয়ারপারসনের সচিবালয় হাওয়া ভবনের কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব পেলেন। এরপর কী হলো? শুনলে অনেকে অবাক হবেন, আমাদের জানা মতে, হাওয়া ভবনই একমাত্র রাজনৈতিক অফিস, যেখানে দলের সব নেতার ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত ছিল। ধরুন আপনি জানতে চান, ছাত্রদলের কোনো এক ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদকের পিতামহের পেশা কী ছিল। হাওয়া ভবন থেকে সেটা জানা সম্ভব ছিল। ক্লিক করলেই কম্পিউটার তা জানিয়ে দিচ্ছে। তারেক রহমান চেয়েছিলেন, দলের সব নেতাকর্মীর তালিকা থাকবে, ছবিসহ এবং পারিবারিক তথ্যাবলিসহ। শুরু করেছিলেন ছাত্রদল দিয়ে, সেটা করাও হয়েছিল। সাধারণ কর্মীর বাইরে, শুধুমাত্র বিভিন্ন কমিটিতে যারা সদস্য, তাদের সচিত্র জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে ডাটাবেইস করেছিল হাওয়া ভবন। লক্ষ্য ছিল এরপর যুবদলের ডাটাবেইস করা হবে। কিন্তু আমরা অবাক হই এসব কথা ভেবে। ক্যারিশমাটিক একজন নবীন নেতা, এভাবেই তাকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমাদের। এতটা ভিশনারি একজন নেতার বিরুদ্ধে ওয়ান ইলেভেনের পর যেসব অভিযোগে মামলা হলো, তা দেখে আমরা কাছ থেকে দেখা মানুষটার সঙ্গে মেলাতে পারি না। কষ্ট হয়। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকের মতামত নিয়েছি। বুঝতে চেষ্টা করেছি, তারেক রহমানকে ঘিরে এত নিন্দার ঝড় কেন? এখানে বিএনপিবিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের একটা বিশাল অবদান রয়েছে। হাওয়া ভবন, তারেক রহমান আর দুর্নীতি-  তিনটি বিষয়কে সমার্থক করে দেয়ার একটা জোরালো প্রচেষ্টা সব সময় ছিল। আমাদের ভুললে চলবে না, ২০০১ থেকেই হাওয়া ভবন তুমুল ব্যস্ত ছিল। বিএনপির নির্বাচনি কর্মকাণ্ড, কৌশল নির্ধারণ, প্রচার-প্রচারণা-  সব কিছুই হাওয়া ভবনে ডিজাইন করা। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির বিরোধী শক্তি হাওয়া ভবনকে নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেছে। তারা স্পষ্টই উপলব্ধি করেছিল, তারেক রহমান খুব ধীরে হলেও দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন বিএনপির পরবর্তী কাণ্ডারী হিসেবে। বিপরীতে দাঁড় করানোর মতো কাউকে তখনো পাওয়া যায়নি। পাওয়া যাক বা না যাক, তারেক রহমানের ইমেজ নষ্ট করতে হবে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিএনপিবিরোধী শিবির নিয়মিত বিষোদগার করে গেছে। এই কৌশল কাজে লেগেছে কি? লেগেছে। দুর্নীতি কোন সরকার করেনি? এরশাদ স্বৈরাচারকে উৎখাতের পর ক্ষমতায় এসেছে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ। আওয়ামী আমলে কি দুর্নীতি হয়নি? হয়েছে। দেশের মানুষ সব জানে, বোঝে। কিন্তু বিএনপি যখন দ্বিতীয় দফা সরকারে এলো, তার আগেই হাওয়া ভবন আর তারেক রহমান সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণায় জয়ী হয়ে গেছে বিএনপিবিরোধীরা। আওয়ামী লীগ আমলে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তার হিসাব করতে হলে দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর দুর্নীতির যোগফল বের করতে হবে। কিন্তু বিএনপি আমলের দুর্নীতির কথা বলতে গেলে সবাই হাওয়া ভবন আর তারেক রহমানের কথাই বলবে, এমন একটি মানসিক অবস্থা সফলভাবেই তৈরি করতে পেরেছে বিএনপিবিরোধী মহলটি। এটা পারার একটি বড় কারণ, বিএনপির মিডিয়া উইং বরাবরই দুর্বল, অন্তত প্রতিপক্ষের তুলনায়। ২০০১ সালে সরকার গঠনের পর বিএনপির মিডিয়া উইং অনেকটা জোরদার হয়েছে নিঃসন্দেহে, তবে এখনো প্রতিপক্ষকে ডিঙ্গাতে পারেনি। এসব কথা থাক। এসব কথায় রাজনৈতিক বিরোধ জন্ম নেবে, ব্যক্তিগতভাবে এখন আর কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নই, তাই রাজনৈতিক বিষয় থেকে বের হয়ে আসাই ভালো।‌‌‌‌‍‍‌
সম্পাদক নাইমুল ইসলামের ভাষায়, বিএনপির অসংখ্য কর্মী তারেকের মধ্যে দেখেন জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি। তারেক রহমানের অনেক ভুলভ্রান্তির সঙ্গে কিছু অনবদ্য ইতিবাচক চিন্তা ও কর্ম ছিল সেটা কেউ এখন আর মনে করে না। তারেক রহমান যে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সীমা বাড়ানোর জন্য বঙ্গোপসাগরের ভেতরে সম্ভাবনার কথা জানতেন, তিনি যে গ্রামবাংলার ছাড়ানো-ছিটানো বসতবাড়ির কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া অনেক ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে এবং এর যে কী সমাধান হতে পারে, ঘরবাড়িগুলো পরিকল্পিতভাবে গুচ্ছ গুচ্ছ করতে পারলে একটা ভালো সমাধানে হতে পারে বলে তারেক ভাবতেন-  এসব নজর এড়িয়ে যাবে কেন? তারেক রহমান ফরহাদ মাজহারের নয়া কৃষি আন্দোলনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিতে টাঙ্গাইলে চলে গিয়েছিলেন। অথবা যুক্তরাষ্ট্রে গেলে মাইক্রোসফ্টের কার্যালয়ে যান। বাংলাদেশের কজন নেতা রাষ্ট্রীয় সফরের বাইরে নিজ আগ্রহে এমন করেছেন?
আমরা এতক্ষন কেবল তারেক ও জয়ের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু আরেকটি বিষয় আলোচনা বাদ রয়ে গেছে। সেটি হলো ঢাকার একটি পত্রিকা গত মাসে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে, শেখ হাসিনা ও তারেকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগঃ মামলার সংখ্যা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে এগিয়ে শেখ হাসিনা। কাউন্সিলে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামীলীগ কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তারেক রহমানকে এই দায়িত্বে নিয়ে আসার মাধ্যমে বিএনপি দুর্নীতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামীলীগ

No comments:

Post a Comment